ছবি: শাটারস্টক।
রান্নাঘরের সবচেয়ে সস্তা জিনিসটির নাম নুন। অথচ এই নুনের অধিকার নিয়ে কত যুদ্ধই না লড়া হয়েছে ইতিহাসে!
ব্রিটেন, আমেরিকা, চিন, মেক্সিকো তো বটেই ভারতেও ব্রিটিশ শাসকদের লবণনীতির বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। নুনের জন্য আলাদা করে তৈরি হয়েছে বাণিজ্যপথ। নুনকে বিনিময় মূল্য হিসাবেও ব্যবহার করা হত এক কালে। শুধু তা-ই নয়, নুন খাওয়ার জন্য এককালে কর দেওয়ারও নিয়ম ছিল। যেমন কর দিতে হয় আর পাঁচটা মহার্ঘ জিনিস হাতে পাওয়ার জন্য। কিন্ত নুনের কি এমন গুণ আছে, যার জন্য এত কিছু?
নুন সহজলভ্য। হয়তো সে জন্যই নুনের গুণ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে দেখা যায় না কাউকে। নুন কি, তা টের পাওয়া যায়, রান্নায় তার মাত্রার হেরফের হলে। আবার রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া দন্তশূলেও আরাম দেয় নুন। ঈষদোষ্ণ জলে নুন দিয়ে কুলকুচি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। গলায় ব্যথা হলে বলা হয় নুন জলে গার্গল করতে। খাবার সংরক্ষণ, খাবার দূষণমুক্ত করার জন্যও ব্যবহার করা হয় নুন। রান্না করার আগে শাক-সব্জিকে নুন জলে ভিজিয়ে রাখতে বলা হয় ক্ষতিকর কীটনাশক এবং পোকামাকড় থেকে মুক্ত করার জন্য।
ছবি: শাটারস্টক।
আসলে নুন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে কথাটি যতই জ্বলুনির শেষ মাত্রাকে বোঝাক, ইতিহাস বলছে চিকিৎসকদের জনক হিপোক্রিটস বহু রোগের চিকিৎসার জন্য সাগরের লোনা জলে ভরসা করতেন। তাঁর গবেষণাজাত থালাসোথেরাপিতে সাগরের জল ব্যবহার করা হত শরীরকে বিষমুক্ত করা থেকে শুরু করে, শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে। এমনকি, পেশিকে শিথিল করতেও ব্যবহার হত সাগরের নুন জল। শুধু তা-ই নয়, নুন জল বহু শতাব্দী ধরে রূপচর্চার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ত্বকের সমস্যা দূর করতে গ্রিস এবং রোমে নুন জলের ব্যবহার হয়েছে প্রাচীন কাল থেকে। আর আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে সামুদ্রিক ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভাল। এমনকি, তা ত্বকে তারুণ্য ফেরাতেও কার্যকরী।
ত্বকে কী কী উপকারে লাগে সামুদ্রিক নুন?
ছবি: শাটারস্টক।
ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা: ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর নুন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বক থাকে নরম এবং মসৃণ।
দূষণ মুক্তি: অনেক সময়েই ত্বকে অতিরিক্ত জল রন্ধ্রপথগুলির মুখ বড় করে দেয়। তাতে ধুলো-ময়লা প্রবেশ করে ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। নুনে থাকা অস্মোটিক উপাদান ত্বক থেকে বাড়তি জল এবং দূষণ বার করে আনতে সাহায্য করে। তাকে ত্বকের রন্ধ্রমুখের মাপও ছোট দেখায়। ত্বকে ব্রণ-ফুশকুড়ির সমস্যা কম হয়।
তৈলাক্ত ভাবে ভারসম্য: তৈলাক্ত ত্বক থেকে নিঃসৃত সিবাম অতিরিক্ত পরিমাণে বেরোলে তা নানারকম ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে মাথার ত্বকে সিবামের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে লাগে নুন। বহু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করার জন্য সল্ট স্ক্রাব তৈরি করে।
ছবি: শাটারস্টক।
সতেজ ভাব : নুন দিয়ে ত্বককে মৃত কোষ মুক্ত করার পন্থা বহু পুরনো এবং কার্যকরীও। সামুদ্রিক নুন বা ম্যাগনেসিয়াম এবং নানা খনিজ সমৃদ্ধ নুন নারকেল তেল কিংবা কাঠবাদামের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হাত-পা-মুখে স্ক্রাবার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। চাইলে তাতে মিশিয়ে নিতে পারেন, কফির গুঁড়ো, মধু বা দুইও। এই স্ক্রাব ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছবে ত্বকে। ত্বক হবে উজ্জ্বল এবং টান টান। পাশাপাশি ত্বকের মৃত কোষ উঠে যাওয়ায় ত্বকে আসবে সতেজ ঝলমলে ভাবও। ফলে আরও তরুণ দেখাবে চেহারা।
ত্বকের রোগ প্রতিরোধ: এগজ়িমা, অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে নুন।
চুল ভাল রাখে: জল, অ্যাপল সাইডার ভিনিগার এবং এক টেবিল চামচ নুন একসঙ্গে মিশিয়ে তা দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে তা চুলকে দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি চুলে ঝলমলে ভাব আনবে। তবে মাথার ত্বকের যত্ন নিতে হলে নুন, মধু এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে স্নানের আগে মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন। তার পরে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার দিয়ে নিন।
ছবি: শাটারস্টক।
সতর্কতা
নুনের স্ক্রাবার অতিরিক্ত ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন ত্বকের চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, নুন যদি ত্বকের পরিচর্যার জন্য ব্যবহার করেন, তবে তা সপ্তাহে দু’বার করলেই ভাল। তার বেশি করলে ত্বকের সমস্যা হলেও হতে পারে।