Jaipur Literature Festival

সমকামী বলে নিজেকে যেন একা না মনে করে নতুন প্রজন্মের কেউ, স্মৃতিকথা লিখে বার্তা ওনিরের

‘আই অ্যাম ওনির অ্যান্ড আই অ্যাম গে: আ মেময়ার’ নামে একটি স্মৃতিকথামূলক বই লিখেছেন চলচ্চিত্রকার ওনির। তা নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় বসলেন পরিচালক।

Advertisement
সুচন্দ্রা ঘটক
জয়পুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫১
নিজের বড় হয়ে ওঠার সময়ের স্মৃতি লিখেছেন চলচ্চিত্রকার ওনির। তবে একা নয়। সে কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁর দিদিও।

নিজের বড় হয়ে ওঠার সময়ের স্মৃতি লিখেছেন চলচ্চিত্রকার ওনির। তবে একা নয়। সে কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁর দিদিও। নিজস্ব চিত্র।

এখনই জীবনী লেখার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু তার পর মনে হল, নিজে যা পাননি, সেটা অন্তত এ প্রজন্মের কেউ পাক। সমপ্রেমীদের জীবন কেমন হতে পারে, তা জানতে পারেন না অনেকেই। ফলে কিশোরবেলায় নানা প্রশ্নের উত্তর মেলে না। বুঝতে পারেন না, তাঁর কথা অন্যরা বুঝছেন না কেন। পরের প্রজন্মের এমন সঙ্কটের সমাধান করতেই নিজের জীবনের নানা কথা দু’মলাটের মধ্যে ধরে রাখলেন চলচ্চিত্রকার ওনির।মূলত নিজের বড় হয়ে ওঠার সময়ের স্মৃতি লিখেছেন চলচ্চিত্রকার ওনির। তবে একা নয়। সে কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁর দিদিও। বইয়ের নাম ‘আই অ্যাম ওনির অ্যান্ড আই অ্যাম গে: আ মেময়ার’। ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ সে বই নিয়ে আলোচনা করতে এসেছেন। কাজের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘বই লিখতে গিয়ে দিদি আর আমি আরও কাছাকাছি এলাম। আমার নিজের কিছু কথা বললাম, যে সব ও আগে সে ভাবে জানত না। আবার ওর আমাকে ঘিরে নানা অভিজ্ঞতা ছিল, সে সব কথা সামনে আসায় পরিপূর্ণ হল স্মৃতি।’’

Advertisement

অতিমারির সময়ে দিদিই তাঁকে বলেন বইটি লেখার কথা। তবে লিখতে গিয়ে নতুন করে বহু পুরনো কথা মনে এসেছে ওনিরের। অনেক সময়ে পুরনো ক্ষত, জ্বালা থেকে মুক্ত করে লেখা। তাঁর ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটা হয়নি বলেই মনে করেন ওনির। তবে নিজের জীবনকে ফিরে দেখতে মন্দ লাগেনি ‘মাই ব্রাদার নিখিল’, ‘আই অ্যাম’-এর পরিচালকের। বলেন, ‘‘এখন সময় বদলালেও ততটা তো পরিবর্তন আসেনি। এখনও যৌনতার নিরিখে প্রান্তিকদের জন্য খুব বেশি কথা বলে না কেউ। তাই নিজেদের কথা বলে যেতে হবে।’’ ওনির অবশ্য এ কথা নিজের জন্য বলছেন, এমন নয়। মনে করান, ‘‘বলিউড সে দিক থেকে অনেক বেশি উদার। কখনও সে ভাবে প্রান্তিক বলে মনে হয়নি নিজেকে।’’

তেমনই যদি হবে, তবে তাঁর ছবি সে ভাবে সাফল্য অর্জন করে না কেন? ওনির ‘ব্যবসা’ আর ‘ভদ্রতা’র মধ্যে ফারাক করার কথা বলেন। বলেন, ‘‘আমি যে সব বিষয় নিয়ে ছবি বানাই, তা বাণিজ্যিক ভাবে সব সময় সফল হবে বলেও মনে করা হয়নি বলিউডে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কেউ অভদ্রতাও করেননি।’’ সমকামিতা নিয়ে ছবি বানিয়ে যে বিশেষ ব্যবসা হবে না, তা সে সময় জানত বলিউড। তবু ওনির ‘মাই ব্রাদার নিখিল’ বানিয়েছিলেন সেই ২০০৫ সালে। তবে এত বছর পরেও তা নিয়ে কোনও দুঃখ নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের প্রাক্তনী ওনির বলেন, ‘‘অনেকে বলেছেন, সময়ের আগেই ছবিটি বানিয়ে ফেলেছি আমি। কিন্তু আমার তা নিয়ে দুঃখ নেই। নতুন পথ দেখিয়েছি। প্রথম হয়েছি। আমি তাতেই খুশি। ভিড়ের মধ্যে এক জন হওয়ার চেয়ে ভালই।’’

নিজের পছন্দের ঋত্বিক ঘটকের কথা মনে করান ওনির। তাঁকেও তো কেউ বোঝেননি আগে, বক্তব্য কলকাতায় বড় হওয়া বাঙালি চলচ্চিত্রকারের। স্মরণ করান, গুরু দত্তের কথা। ‘‘ফলে আমার মনে হয় না আমি একাই এই পথে হাঁটছি। নিজের যা বলার তা তো বলে যেতেই হবে,’’ বক্তব্য ওনিরের। এলজিবিটিকিউএ নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। এমন সময়ে যত বেশি কথা বলার মতো জিনিসের জোগান দেওয়া যাবে, ততই কাজে লাগবে বলে মনে করেন ওনির। এই বই সেই ভাবনা থেকেই তৈরি। সঙ্গে আবার নতুন ছবির কাজও শুরু করেছেন। ‘পাইন কোন’ নামের সেই ছবি এক সমকামী পুরুষের জীবনের তিন দশকের কথা বলবে। তবে শুধু যৌনতার নিরিখের প্রান্তিকদের কথা বলেন, তেমন তো নয়। আগে যেমন একা মায়ের লড়াই, ঘর ছাড়ার যুদ্ধ নিয়ে ছবি করেছেন, সম্প্রতি মণিপুরের দ্বন্দ্ব নিয়েও বানিয়েছেন তথ্যচিত্র। যার যার কথা বলা জরুরি, সকলের কথাই এক এক করে বলে যেতে চান চলচ্চিত্রকার।

আরও পড়ুন
Advertisement