Covid Infection

Covid Hero: করোনাকালে রোজগার নেই কালীঘাটের যৌনপল্লিতে, পাশে আছেন ‘বড় আন্টি’

এমন অনেকে আছেন, যাঁদের মা বলে স্বীকৃতি দিতেও অস্বস্তি হয় সমাজের। রোজগার না থাকলেও পাশে পান না বিশেষ কাউকে। যৌনকর্মী সেই মায়েদের সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছেন এই মা।

Advertisement
সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৯:০৫
কালীঘাটের যৌনপল্লিতে শিশুদের জন্য স্কুল চালান ঝুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়।

কালীঘাটের যৌনপল্লিতে শিশুদের জন্য স্কুল চালান ঝুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

একাই দুই সন্তানকে বড় করছেন। জানেন সেই লড়াই। পাশে দাঁড়াতে চান তাঁর মতোই মায়েদের, যাঁরা একার রোজগারে সন্তানদের বড় করছেন। করোনা বিপর্যস্ত এই সময়ে কোন মাকে সাহায্য করা বেশি প্রয়োজন? এমন অনেকে আছেন, যাঁদের মা বলে স্বীকৃতি দিতেও অস্বস্তি হয় সমাজের। রোজগার না থাকলেও পাশে পান না বিশেষ কাউকে। তাঁদের লড়াই খুব কঠিন। যৌনকর্মী সেই মায়েদের সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছেন এই মা।

কালীঘাটের যৌনপল্লিতে শিশুদের জন্য একটি স্কুল চালান চেতলার ঝুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা আসার আগে প্রতি সন্ধ্যায় মায়েরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তখন সন্তানেরা ‘সহজপাঠ’-এর ক্লাসঘরে দুধ-পাঁউরুটি খেত। লেখাপড়া শিখত। রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি যেত। করোনায় স্কুল বন্ধ। শুধু তো তা নয়, মায়েদের কাজও বন্ধ। রোজগার নেই। খাবে কি এই শিশুরা? যৌনপল্লির শিশুদের ‘বড় আন্টি’, ঝুমকির চিন্তায় ঘুম ওড়ে।

Advertisement

গত বছর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই খুঁজতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার পথ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান ঝুমকি। নাম ‘নতুন জীবন’। সেখানকার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এখন কালীঘাটের যৌনপল্লির মায়েদের সাহায্য করছেন তিনি। ‘‘সন্তানদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে যাতে সমস্যায় না পড়েন তাঁরা, সেটুকু তো করতেই হবে’’, বলছেন ঝুমকি। তবে তিনি জানেন, মা না খেলে শিশুর মন ভাল থাকে না। প্রতি সপ্তাহে নিজের স্কুলের ৪৫জন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ-ডিম যাচ্ছে তাদের মায়েদের জন্যও।

কালীঘাটের ওই অঞ্চলে পাঁচশোর বেশি যৌনকর্মী আছেন। সকলকেই খাবার দিতে চেষ্টা করেন ঝুমকি। সব সময়ে হয়তো পেরে ওঠেন না। তবে চেষ্টা থামেনি। নিজের ছাত্রছাত্রী ও তাদের মায়েদের প্রতি সপ্তাহে রেশন দিলে, বাকিদেরও দু’-তিন সপ্তাহ অন্তর শুকনো খাবার দিয়ে আসেন। তিনি বোঝেন আশপাশে সকলে ভাল না থাকলে শিশুরা ভাল ভাবে বেড়ে উঠবে না।

কীসের জন্য আটকে যায় কাজ? অর্থ? ‘‘যৌনকর্মীদের জন্য টাকা চাইলে পরিচিত অনেকেই আর সাহায্য করেন না। তখন অসুবিধা হয়।’’ নিজের অর্থ, সংস্থার খানিক অর্থ ছাড়াও পরিজনেদের সাহায্য নিয়েই যে গত বছর থেকে এই কাজ করছেন ঝুমকিরা। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর বাবা বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মৃত্যু ঘটার আগে পর্যন্ত পাশে ছিলেন তাঁর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অরূপ সেনগুপ্তও।

শিশুদের লেখাপড়া কি এখন বন্ধ? সার্বিক বৃদ্ধির দিকেই নজর দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন ঝুমকি। খাবারের সঙ্গেই মায়েদের হাতে খাতা-পেন্সিল-রং পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে বসে করার মতো সারা সপ্তাহের কাজও দেন। পরের সপ্তাহে মা রেশন নিতে এলে বড় আন্টির কাছে পৌঁছে যায় শিশুদের সপ্তাহের কাজও।

তবে তো সবই করতে পারছেন তিনি? তেমনও নয়। আরও অনেক কিছু করতে ইচ্ছা হয়। শুধু যৌনপল্লির শিশু বলে সমাজকে পাশে পায় না। তাদেরও তো পেট আছে। ভবিষ্যৎ আছে। সমাজ এমন কঠিন সময়ও দূরে কেন সরিয়ে রাখতে চায় ওদের, ভেবেই পান না ঝমুকি!

Advertisement
আরও পড়ুন