(বাঁ দিক থেকে) ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, মানালি দে, দিতিপ্রিয়া রায়, সোহিনী সরকার, দর্শনা বণিক এবং মৌবনী সরকার। —ফাইল চিত্র।
প্রতি বছর ঠিক কালীপুজোর আগেই দেখা মেলে তাদের। ঝাঁকা ভরে ওলটপালট করে রাখা থাকে বাজারে, মুদিখানা-মণিহারি দোকানে, দশকর্মা ভান্ডারে। লালচে রং, গায়ে সামান্য নকশা বা নকশাহীন। হাতে নিলেই পোড়ামাটির রং লেগে যায় হাতে। বাজার-দোকান করতে এসে অর্ডার হয় তাদেরও— ‘চোদ্দোখানা ভাল দেখে দিয়ে দাও তো! ভাঙা যেন না থাকে!’ ইদানীং অবশ্য ১৪ মিনিটে বাড়িতে জরুরি জিনিস পৌঁছে দেওয়ার অনলাইন পরিষেবাতেও পাওয়া যাচ্ছে। মাটির প্রদীপ!
এককালে এই মাটির প্রদীপই ছিল আলোর উৎসবের একমাত্র সঙ্গী। দীপান্বিতার পুজোর আগে মাটির প্রদীপের জন্য বিশেষ ভাবে অর্ডার দিয়ে আনানো হত তিলের তেল আর আঁশ তুলোর সলতে। কালীপুজোয় বা ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যায় সেই তেল আর সলতে দিয়ে প্রদীপ সাজানোর দায়িত্ব পড়ত বাড়ির ছোটদের কাঁধে। ধীরে ধীরে প্রদীপ গিয়ে এসেছে বাতি। বাতির আলো মলিন হয়েছে ঝলমলে ছোট ছোট চিনে ল্যাম্পে। কিন্তু পাড়ার বাজার, মুদিখানা-মণিহারি দোকানে প্রদীপের ঝাঁকা মিলিয়ে যায়নি। বরং অনলাইন বাজার দোকানও অনুভব করেছে মাটির প্রদীপ ছাড়া দীপাবলি অসম্ভব।
কিন্তু এ কালের প্রজন্ম কী ভাবছে? তারা কি দীপাবলির উদ্যাপনের জন্য প্রদীপই পছন্দ করেন? না কি বাতি? না সহজে সাজানোর বাহারি আলোই এ যুগের শৌখিনীদের পছন্দ? প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন হাজির হয়েছিল টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে। জবাবে উঠে এল নানা রকম ভাবনা।
আঁধারে প্রদীপ সোহিনীর
এ বছর দীপাবলি উদ্যাপনের মন নেই সোহিনী সরকারের। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘আমি এ বারে দীপাবলি উদ্যাপন করছি না। আলো দিয়ে বাড়ি সাজানোর কথাও ভাবিনি। যেটুকু করব, সেটা রীতি মানার জন্য। তবে সেটা যখন করব, তখন জ্বালব প্রদীপই।’’ আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িয়েছিলেন সোহিনী। সেই আন্দোলনের রেশ এখনও কাটেনি। তাই উৎসবে মন দিতে পারছেন না অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘অনেকেই পারছেন না। আমাদের সোসাইটিতে যেখানে পুজো হয়, ওরা প্রতি বার মহালয়া থেকে আলো দিয়ে সাজায়। এ বার সাজায়নি। কালীপুজোতেও সাজাবে না বলেছে। তবে কালীপুজোয় একেবারে কি বাড়িতে আলো জ্বলবে না? জ্বলবে। রীতি মেনে যেটুকু করা প্রয়োজন, সেটুকুই হবে। হয়তো মাটির প্রদীপই জ্বালা হবে।’’
দীপ দর্শনেই দীপাবলি দর্শনার
অভিনেত্রী দর্শনা বণিক দিল্লিতে শুটিংয়ে ব্যস্ত। তবে দীপাবলির জন্য সেখান থেকেই মাটির প্রদীপ কেনার কথা মনে করিয়ে দেবেন বাড়িতে। অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘আমার সব সময়ে প্রদীপই প্রিয়। মনে আছে, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে কুমোরটুলি গিয়ে সুন্দর দেখতে মাটির প্রদীপ কিনে নিয়ে এসেছিলাম। সেই প্রদীপগুলিই প্রতি বছর কালীপুজোর সময়ে বার করতাম। ব্যবহার হয়ে গেলে পরিষ্কার করে তুলে রাখতাম। আবার তেল আর সলতে দিয়ে সাজাতাম। নষ্ট করতে ইচ্ছে করত না। সেই প্রদীপগুলো এখন নেই। তবে আমার চেতলার বাড়িতে এবং শ্বশুরবাড়িতে মাটির প্রদীপ কেনা হয়। আমার দীপাবলি মানে প্রদীপ থাকবেই। এ বার শুটিংয়ের জন্য দিল্লিতে আছি, তাই এখনও কেনা হয়নি। তবে ভাবছি এখান থেকেই ওদের মনে করিয়ে দেব। কালীপুজোর সময়ে ছুটিই থাকে, বাড়িতে নিজে হাতে প্রদীপ জ্বালাব।’’
দিতিপ্রিয়ার বাতিপ্রেম
কালীপুজো বললে বাঙালি টিভি দর্শকদের এক বার অন্তত ‘রানি রাসমণি’ অর্থাৎ, দিতিপ্রিয়া রায়কে মনে পড়বে। দিতিপ্রিয়া টলিউডের নতুন যুগের অভিনেত্রী। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রদীপ, বাতি না মিনিয়েচার বাল্ব, দীপাবলির সাজের জন্য কোনটা পছন্দ? দিতিপ্রিয়া জানালেন, যে কোনও ধরনের উষ্ণ রঙের আলোই তাঁর পছন্দ। তবে দীপাবলি বললে প্রথম প্রদীপের কথাই মনে আসে। দিতিপ্রিয়া বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় নিজের হাতে মাটি দিয়ে প্রদীপ বানাতাম। সেই প্রদীপই জ্বালানো হত বাড়িতে। তখন সময়টাই ছিল অন্য রকম। বাবার আদি বাড়িতে পরিবারের সবার সঙ্গে থাকতাম। বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা ছিল। সেখান থেকে মাটি নিয়ে প্রদীপ বানাতাম। এখন ফ্ল্যাটে থাকি। প্রদীপ আর বানানো হয় না। তবে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর জন্য মাটির প্রদীপ কিনে নিই।’’ তবে দিতিপ্রিয়ার পছন্দ সুগন্ধি বাতি। অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘বাতি ভালবাসি বলে কিছু দিন আগে জন্মদিনেও অনেক বাতি উপহার পেয়েছি। কালীপুজোতে সাজাতে হলে হয়তো বাতি দিয়েই সাজাবে।’’
বাবার সঙ্গে বাতিই জ্বালান ঋতব্রত
যে কোনও আলোই ভাল লাগে অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তবে পুজোর সময় বাড়ি সাজানো হয় টুনি বাল্ব দিয়ে। এ বছর যদিও হয়নি। ঋতব্রত বললেন, চিকিৎসকেরা অনশন করছিলেন তাই বাড়িতে আলো জ্বালাননি। ওঁরা অনশন তুলে নেওয়ার পরে বাড়ি আলো দিয়ে সাজিয়েছেন। তবে ঋতব্রতের কালীপুজো মানে বাবার সঙ্গে বাতি জ্বালানো। ঋত বললেন, ‘‘ছোট থেকেই কালীপুজোর দিন বাবার সঙ্গে বাতি দিয়ে বাড়ি সাজাতাম। এখনও সেটা করি। মাটির প্রদীপ সে ভাবে জ্বালানো হয় না।’’
মানালির প্রদীপ পরশমণি
অভিনেত্রী মানালি দে জানাচ্ছেন, তাঁর বাড়ি কালীপুজোর সময় সাজানো হয় ছোট ছোট টুনি ল্যাম্প দিয়েই। মানালি বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, মিনিয়েচার আলো দিয়ে বাড়ি সাজান বাবা। সেই নিয়মই এখনও চালু আছে। বিয়ের পরে দেখেছি শ্বশুরবাড়িতেও মিনিয়েচার আলো দিয়েই বাড়ি সাজানো হয়। তবে প্রদীপ ভাল লাগে না তা নয়। বরং আমি মনে করি প্রদীপ বা বাতির যে আগুনের শিখা, তা অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন প্রদীপ জ্বালি বা বাতি জ্বালি।’’ মানালির কাছে প্রদীপ শুধু ঘর সাজানোর জিনিস নয়। আরও অনেক বেশি কিছু। তবে যে হেতু আগুন, তাই নিরাপত্তার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয়। ঘর সাজানোর জন্য তাই তাঁর মিনিয়েচার আলোই পছন্দ।
সীমান্তে দীপই জ্বালবেন মৌবনী
তিনি জাদুকর পি সি সরকার জুনিয়রের কন্যা। দীপাবলির আলোতেও তাই থাকবে ‘ম্যাজিকের’ ছোঁয়া। তেল নয়, জল দিয়ে দ্বীপ জ্বালবেন মৌবনী সরকার। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘মাটির প্রদীপ ভাল লাগে। তবে এখন যে জলপ্রদীপ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোও খুব ভাল লাগে।’’ জলপ্রদীপ হল ছোট ছোট ব্যাটারির প্রদীপ। তাতে জল ঢাললেই দীপ্যমান হয় ব্যাটারি চালিত প্রদীপের ‘শিখা’। মৌবনী বলছেন, ‘‘আমার বাড়িতে সাবাই কালী ঠাকুরের ভক্ত। দীপাবলিতে বাড়ি আলো দিয়ে সাজানোও হয়। আর এ বছর তো কালীপুজোর তাৎপর্য আরও বেশি। কারণ আমরা অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের কথা বলছি। চেষ্টা করছি, যাতে আমরা অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরতে পারি। এ বছর আমি দীপাবলিতে থাকব সীমান্তে। বিএসএফ সৈন্যদের সঙ্গে প্রদীপ জ্বালব। পরে কালীপুজোয় বাড়িতে গিয়ে মাটির প্রদীপ আর জলপ্রদীপ দিয়ে সাজাব।’’