Diabetes and Obesity

কার্বস থাকুক আড়ালে

সরাসরি শুধু কার্বোহাইড্রেট না খেয়ে তার উপরে রাখুন প্রোটিন ও ফ্যাটের স্তর

Advertisement
নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৩

ওজন কমাতে বা ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথমেই কোপ পড়ে কার্বোহাইড্রেটে। কিন্তু ঠিকমতো কার্বস খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এমন শর্করা বাছতে হবে, যেটা শরীরে প্রবেশ করেই গ্লুকোজ় লেভেল ঝট করে বাড়িয়ে দেবে না। আর কার্বসকে প্রোটিন ও ফ্যাটের যোগ্য সঙ্গতে যদি খাওয়া যায়, তা হলেও ক্ষতি কম। শুধু কার্বস না খেয়ে তার উপরে রাখুন অন্য খাবারের স্তর।

Advertisement

কার্বস নির্বাচন

প্রথমে দেখতে হবে আপনি কী ধরনের কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছেন। সাদা ভাত, গমের আটা, ময়দা খেলে সেখানে খাদ্যাভ্যাসে বদল আনলে ভাল। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ড. অনন্যা ভৌমিক বলছেন, “যাঁরা ভাত খেতে ভালবাসেন তাঁরা সাদা চালের বদলে মাটা রাইস (রেড) খেতে পারেন। এর পুষ্টিগুণ বেশি। আবার ময়দা না খেয়ে মাল্টিগ্রেন আটার রুটি রাখুন খাদ্যতালিকায়। কমপ্লেক্স কার্বস ভাঙতে সময় লাগে। তাই শরীরে ঢুকেই গ্লুকোজ়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না। অন্য দিকে এমন খাবার কম্বিনেশন বাছতে হবে, যাতে গ্লাইসেমিক লোডও কম হয়।”

শুধু কার্বস নয়, সঙ্গত জরুরি অন্য খাবারের

কার্বসের সঙ্গে কী খাচ্ছেন সেটাও ভীষণ জরুরি। ভাত, রুটি যা-ই খান, তার উপরে থাকুক প্রোটিন বা সবজির চাদর। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ি বলছেন, “সকালের জলখাবারে মাখন বা জ্যাম দিয়ে দু’চারটে পাউরুটি টোস্ট না খেয়ে বরং একটা ডিম সিদ্ধ খান। তার সঙ্গে থাকুক একটা বা দুটো টোস্ট। আমাদের পেট ভরায় কিন্তু প্রোটিন। তা হজম করতেও সময় লাগে। তাই শুধু কার্বস খেলে পেট ভরাতে বেশি খেয়ে ফেলেন অনেকে। সেখানে টোস্ট খাওয়ার আগে একটা বা দুটো ডিম সিদ্ধ খেলে পেট ভরবে। কার্বস খাওয়ার প্রবণতাও কমবে।”

আবার বাঙালি খাবারে ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ যখন খাবেন, তখন প্রত্যেকটার পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়াঙ্গীর কথায়, “থালার অর্ধেকটা ভরাতে হবে সব্জি দিয়ে। সেখানে দু’রকম তরকারি রাখতে পারেন, সঙ্গে থাকুক স্যালাড। বাকি প্লেটের অর্ধেকটা অর্থাৎ এক কোয়ার্টারে থাকুক মাছ, মাংসের মতো প্রোটিন। নিরামিষাশী হলে ডাল, রাজমা। আর বাকি অর্ধেকে থাকুক ভাত। এই অনুপাতে খেলে ফাইবার, প্রোটিন সব পরিমাণ ঠিক থাকবে। আর কার্বস যেহেতু একা নয়, তাই সেটা ভাঙতেও সময় লাগবে।” পাস্তা খেলেও তার সঙ্গে গ্রিলড মাংস, কিছু সবজি যদি রাখা যায়, তা হলে ভাল। আর ফ্যাট তো রান্নার মাধ্যম হিসেবে থাকছেই। খাদ্যতালিকা থেকে ফ্যাটও বাদ দেওয়া যাবে না। তা হলে গ্লাইসেমিক ম্যানেজমেন্টে প্রভাব ফেলবে।

অনেক সময়ে আলু সিদ্ধ দিয়ে ভাত বা আলুর দম দিয়ে রুটি, শুধু চিঁড়ে, নুডলস খাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কার্বস ইনটেক বেশি হয়। সেখানে অন্য আনাজ বা প্রোটিন থাকে না পরিমাণ মতো। কারণ ভাতের সঙ্গে মাছ বা মাংসের টুকরো বা তরকারি যতটা খাওয়া হয়, চিঁড়ে, সুজি বা নুডলসে সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।

ক্রমানুসারে খেলে ভাল

ভাতের পাতে ডাল, তরকারি, মাছের ঝোল পরপর মেখে খাওয়ার অভ্যেস অনেকেরই। কিন্তু যদি আগে ফাইবার, তার পর প্রোটিন ও শেষে কার্বস খাওয়া যায়, তা হলে শরীরে গ্লুকোজ় শোষণ ধীরে হয়। তাই ভাতের পাতে আগে স্যালাড, তার পরে ডাল, তরকারি একটু করে খেয়ে নিন। পরে মাছের ঝোল বা মাংস দিয়ে ভাতটা খেলেন। এতে উপকার বেশি পাবেন।

“আমাদের শরীরে প্রোটিনের সঙ্গে সুগার জুড়ে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রডাক্টস তৈরি করে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু গ্লাইকেশন প্রক্রিয়া যদি বেড়ে যায়, তখন ডায়াবিটিসের জটিলতা বেড়ে যায়। তার সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারের মতো রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়,” বলে জানালেন প্রিয়াঙ্গী। সেই জন্য সুগার ইনটেক নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

তাই কার্বস একদম বাদ না দিলেও তার সঙ্গে কী খাচ্ছেন, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

Advertisement
আরও পড়ুন