শহরের একটি রেস্তোরাঁয় 'কেক মিক্সিং' উৎসবে মেতেছে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র।
বড়দিন তো এসেই গেল প্রায়। এখন থেকেই ‘কেক মিক্সিং’ উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতার নানা প্রান্তে। বড়দিনের আগে এ হল কেক তৈরির প্রস্তুতি পর্ব। শহরের নামী হোটেল, রেস্তোরাঁগুলিতে কেক মিক্সিংয়ের আসর বসছে ইতিমধ্যেই। রেস্তোরাঁরই আর পাঁচ জন কর্মচারী ও শেফদের সঙ্গে হাতে গ্লাভস পরে কেকের উপকরণ মাখাতে হইহই করে নেমে পড়েছিল খুদেরাও। মুঠো মুঠো শুকনো ফল, বাদাম, কিশমিশ, চেরি, মোরব্বা, ক্র্যানবেরি ছোড়াছুড়ি করে তাদের সে কী আনন্দ!
মেনল্যান্ড চায়নাতে ‘কেক মিক্সিং’ উৎসবের আয়োজন করেছিল ‘ডারিওল বেকারি’। তাদের প্রধান শেফ জোসেফ গোমস বললেন, “গত সাত বছর ধরে আমরা কেক মিক্সিং উৎসব উদ্যাপন করছি। এ বছর ছোটদেরও নিমন্ত্রণ করেছিলাম। তাদের দিয়েই কেকের উপকরণ মাখানো হয়েছে। প্রায় ১৪ রকম মশলা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে। ফলের রস ছিল প্রায় ৬-৭ রকম। কয়েকটি জায়গায় অ্যালকোহলও ব্যবহার করেছি। সমস্ত উপকরণ মাখানো হয়ে গেলে তা সংরক্ষণ করা হবে এক মাস। তার পর কেক তৈরি শুরু হবে। ৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে নানা রকম কেক পাওয়া যাবে।”
‘কেক মিক্সিং’ কথাটির সঙ্গে কিন্তু কলকাতা এখন বেশ পরিচিত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কার এবং রীতি মিলেমিশে গিয়েছে সে কবে থেকেই। দুর্গা পুজোর মতো বড়দিনেও ঝলমল করে ওঠে তিলোত্তমা। কেকের গন্ধে ম ম করে শহরের আনাচ-কানাচ। কয়েকশো বছর আগের ইউরোপ থেকেই কেক তৈরির প্রাথমিক পর্বটির সূচনা হয়, যা পরবর্তী সময়ে রীতিমতো সামাজিক পার্বণ হয়ে ওঠে। নানা রকমের ফ্রুট কেক, প্লাম কেক তৈরির আগে তার উপকরণগুলি ফলের রস, মশলা ও অ্যালকোহলে মাখিয়ে সংরক্ষণ করতে হয় মাস খানেক। বিভিন্ন রকম শুকনো ফল, বাদাম, চেরি, ক্র্যানবেরি, খোবানি, মোরব্বা, কিসমিস, ট্রুটিফ্রুটির মতো ফলের রস ও সুরায় মজে গিয়ে, মশলায় জারিত হয়ে সুস্বাদু হয়ে ওঠে। তখন তা দিয়েই কেক তৈরি করা হয়। এই পর্বটিকেই পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে বলা হয় ‘কেক মিক্সিং সেরিমনি’। এ শুধু কেক তৈরির প্রস্তুতি পর্ব নয়, উৎসবও বটে। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে কলকাতাও এখন কেক মিক্সিং উৎসবে গা ভাসিয়েছে। আগে কেবল শহরের উঁচুতলার কিছু পরিবারে এই উৎসব পালন করতে দেখা যেত। কিন্তু এখন বছর বছর শহেরর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও হোটেল কেক মিক্সিংয়ের আয়োজন করে।
বিলেতের কেক মিক্সিং উৎসব কিন্তু একলা পালন করা হয় না। সকলকে ডেকে এনে হইচই করে কেকের উপকরণ মেশানো হয়। ডারিওল স্পেশালিটির রেস্তোরাঁর জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস ঘোষ বললেন, “বিভিন্ন সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় আনতেই আমাদের এই উদ্যোগ। কেক মিক্সিং ভালবাসা ও সম্প্রীতির উৎসব। এ বছর ছোটরাও তাতে অংশগ্রহণ করে উৎসবের আনন্দকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।”