প্রতীকী ছবি।
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮০ লক্ষ মহিলা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার জন এই অসুখে মারা যান। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র হিসাবে প্রতি বছর ২৩ লক্ষ মানুষ নতুন করে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মহিলাদের মধ্যে এই ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র উদ্যোগে প্রতি বছর অক্টোবর মাসটিকে স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসাবে পালন করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে রোগটিকে সহজেই কব্জা করা যায়, বলছেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটউটের অধিকর্তা, চিকিৎসক জয়ন্ত চক্রবর্তী। কী করে এই অসুখটির বিষয়ে সচেতন হওয়া যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন তিনি।
জয়ন্তর কথায়, স্তনের ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সমীক্ষা বলছে, ফুসফুসের ক্যানসারকে টপকে যাচ্ছে স্তন ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে মহিলাদের জরায়ু মুখের বা সারভিক্সের ক্যানসার বেশি দেখা যেত। গত কয়েক বছরে স্তনের ক্যানসার অনেক বেশি বেড়েছে।
সন্তানকে স্তন্যপান করালে ক্যানসারের আশঙ্কা কমে, এমনই মত অনেকের। কিন্তু কথাটা কি সত্যি? জয়ন্তর মতে, এই অসুখের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি। তবে যে সব মায়েরা সন্তানদের স্তন্যপান করান, তাঁদের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম। সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে।
বংশগত কারণে কি এই ক্যানসার হতে পারে? এমন রোগী আছেন, যাঁদের বংশে এই অসুখের কোনও ইতিহাস নেই। তবে বিএআরসিএ-১ ও বিএআরসিএ-২ নামক জিন থাকলে এই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এমনই জানাচ্ছেন চিকিৎসক। কিন্তু এই জিন আছে কি না, তা পরীক্ষা করা খুবই খরচসাপেক্ষ বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায় কি? ম্যামোগ্রাম করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত প্রত্যেকের। কোনও অস্বাভাবিক ফোলা অংশ অনুভব করলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে। এর পরে চিকিৎসক মনে করলে সিটিস্ক্যান, ফাইন নিডল অ্যাস্পিরেশন সাইটোলজি ও অন্যান্য পরীক্ষা করাতে পারেন। এমনই বলছেন জয়ন্ত।
অনেকেই প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসারের লক্ষণ বুঝতে পারেন না। লাম্প বা টিউমার ছাড়া আর কোনও উপসর্গ আছে কি এই রোগের? জয়ন্ত বলছেন, কতগুলি লক্ষণ দেখলে সাবধান হতে হবে। স্তনবৃন্ত থেকে তরল নির্গত হতে পারে। স্তনবৃন্ত ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। ঘাড়ের পিছন দিকে গ্রন্থি ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। স্তনের কোনও অংশ ঢুকে যেতে পারে। স্তনের আকার ও আকৃতি বদলে যেতে পারে। ৩০ বছরের উপরে বয়স যাঁদের, তাঁরা এই ধরনের উপসর্গ দেখলে দ্রুত ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, এমনই বলছেন জয়ন্ত চক্রবর্তী।
এই ক্যানসারের চিকিৎসা কী ভাবে করবেন? অস্ত্রোপচারই একমাত্র রাস্তা? চিকিৎসকের কথায়, ক্যানসার যুক্ত টিউমার একজায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলে তা কেটে বাদ দেওয়াই ভাল। দরকার মতো কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি বা হরমোন থেরাপি করা যেতে পারে।