Laser skin resurfacing

রোম তোলা ছাড়াও আর কী কী কাজ হয় লেজ়ার থেরাপিতে? কলকাতায় খরচ কত?

লেজ়ার থেরাপির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। রোম তোলার ঝক্কি থেকে তো রেহাই মেলেই, ত্বকের আরও নানা সমস্যার সমাধানও হয়। পুজোর আগে করাতে চাইলে জেনে নিন খুঁটিনাটি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ১০:৫৪
What is Laser Treatment, what are the benefits

লেজ়ার থেরাপি কী ভাবে হয়, কতটা নিরাপদ? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তারকাদের মতো রোমহীন, মসৃণ, চকচকে ত্বক পেতে এখন লেজ়ার থেরাপি করানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কমবয়সিরা তো বটেই, মধ্যবয়সিরাও পিছিয়ে নেই। কলেজপড়ুয়া তরুণী থেকে চল্লিশোর্ধ্ব গৃহবধূ, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এখন অনেকেই লেজ়ার থেরাপি ও সার্জারির পথে। পুরুষেরাও রয়েছেন সেই তালিকায়। কাটাছেঁড়া, ব্যথাবেদনা ছাড়াই যদি হরেক সমস্যা মেটানো যায়, তা হলে ক্ষতি কী! ঘন ঘন সাঁলোয় গিয়ে রোম তোলার সময় ও খরচ তো বাঁচবে। আবার ত্বকের বিবিধ সমস্যার সমাধানও হবে। ধরুন, ট্যাটু করিয়েছিলেন বহু আগে। এ বার তা তুলবেন কী ভাবে? সেখানেও কিন্তু লেজ়ার থেরাপিই কাজে আসবে।

Advertisement

ব্রণ-ফুস্কুড়ি, মুখে দাগছোপ, ক্ষতের দাগ থেকে জন্মদাগ— যে কোনও জটিল থেকে জটিলতর সমস্যার সমাধান করতে পারে লেজ়ার। কলকাতার অনেক জায়গাতেই বেশ রমরম করে চলছে লেজ়ার ট্রিটমেন্ট। খরচও নানা রকম। স্কিন লিফটিং, অবাঞ্ছিত লোম দূর করা, জন্মদাগ দূর করা, স্ট্রেচমার্ক দূর করা, ত্বক মসৃণ করা, ট্যাটু মোছা, জরুল, মেচেতার দাগ থেকে নাছোড় আঁচিল দূর করা, কী ধরনের সমস্যা নিয়ে যাচ্ছেন, তার উপরেই নির্ভর করছে খরচ কত। কলকাতায় লেজ়ার থেরাপির অন্যতম বড় কেন্দ্র হল ভিএলসিসি। শহরের নানা জায়গাতেই তাদের ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করা হলে, সেন্টার থেকে বলা হয় যে, লেজ়ার করাতে হলে আগে ক্লিনিকে এসে ত্বক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তিনি দেখে বলতে পারবেন কী ধরনের লেজ়ার থেরাপি করানো যাবে। সেই অনুযায়ী খরচ পড়বে। হাত, পা অথবা বাহুমূলের মতো জায়গায় রোম তোলার জন্য লেজ়ার করাতে হলে ২৫০০ টাকা থেকে খরচ শুরু হবে। গোটা শরীরের রোম তোলার খরচ পড়তে পারে ৩০ হাজার টাকা থেকে লাখ অবধি। কী ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হবে, কতটা জায়গা জুড়ে রোম অপসারণ করা হবে তার উপরেও খরচ নির্ভর করা হবে। যদি আনুষঙ্গিক ত্বকের সমস্যা থাকে, তা হলে তার থেরাপিও করবেন চিকিৎসকেরা। সাধারণত ৬টি সেশন হতে পারে। থেরাপি শুরুর আগে ‘প্যাচ টেস্ট’ হবে। কোনও রকম অ্যালার্জি বা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে, ত্বক চিকিৎসক আগেই সাবধান করে দেবেন। তবে ‘চিলটিপ’ প্রযুক্তিতে রোম অপসারণ করা হয় এই সংস্থার বিভিন্ন ক্লিনিকে, যা সুরক্ষিত ও নিরাপদ বলেই দাবি করা হয়েছে।

কলকাতায় কায়া ক্লিনিকেও লেজ়ার থেরাপিতে রোম অপসারণ ও ত্বকের বিবিধ সমস্যার চিকিৎসা হয়। সেখানেও গ্রাহকের চাহিদা বুঝে খরচ নির্ধারণ করা হয়। যেমন, দুই পায়ের রোম অপসারণ করতে লেজ়ারে খরচ শুরু হয় ২৬ হাজার টাকা থেকে, দুই হাতের ক্ষেত্রে তা ২৬,৫০০ টাকা থেকে ২৮,০০০ টাকা অবধি। পুরুষ ও মহিলাদের বুক বা পিঠের রোম অপসারণের খরচও প্রায় এক রকম। কেবল বাহুমূলের রোম অপসারণ করাতে হলে তার খরচ শুরু হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা থেকে। সম্পূর্ণ মুখের রোম অপসারণের খরচ ২৩ হাজার থেকে শুরু। তবে এই খরচের তালিকা বিভিন্ন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ভিন্নই হবে। ত্বকের ধরন, প্রকৃতি বুঝেই তা নির্ধারণ করবেন ক্লিনিকের ত্বক চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ কর্মীরা।

অলিভিয়া স্কিন অ্যান্ড হেয়ার ক্লিনিকেও লেজ়ারের বিভিন্ন থেরাপি করা হয়। খরচ আড়াই হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা অবধি। গোটা শরীরের রোম অপসারণ করার খরচ ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু। লা ডার্মা হেয়ার ক্লিনিকে গোটা শরীরের রোম অপসারণের খরচ ৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। তা ছাড়া, হাত, পা, গাল, থুতনি, গলা, বাহুমূল, নাভি থেকে নিতম্ব— রোম অপসারণের খরচ নানা রকম। প্রতিটি সেশনে ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা অবধি খরচ হতে পারে।

লেজ়ার কতটা গ্রহণযোগ্য?

আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি। লেজ়ার দিয়ে মূলত ত্বকে সরাসরি তাপ দেওয়া হয়। লেজ়ারের রশ্মি ত্বকের উপরের স্তর ধ্বংস করে ফেলে। একই সঙ্গে এটি ত্বকের ভিতরের স্তরটিকে উত্তপ্ত করে তোলে। রোম তোলা ছাড়াও আরও অনেক কাজ করা হয় লেজ়়ার থেরাপিতে, এমনটাই জানিয়েছেন বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চর্মরোগ চিকিৎসক শ্রাবণী ঘোষ জ়োহা। আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রাবণী বললেন, “লেজ়ার থেরাপির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অনেকেই ভাবেন লেজ়ার করালে ক্যানসার হতে পারে। কিন্তু এই থেরাপির সঙ্গে ক্যানসারের কোনও যোগ নেই। কারণ লেজ়ার রশ্মি ত্বকের উপরের স্তর অবধিই থাকে, ভিতরে প্রবেশ করে না।”

লেজ়ার থেরাপিতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নেই, আশ্বাস চিকিৎসকের।

লেজ়ার থেরাপিতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নেই, আশ্বাস চিকিৎসকের। ছবি: ফ্রিপিক।

কী কী থেরাপি বেশি হচ্ছে এখন?

রোম তোলার জন্য ডায়োড, আইপিএল (ইনটেন্স ফোটো লাইট) লেজ়ার করা হয়। আইপিএল লেজ়ার থেরাপিতে ত্বকের দাগছোপ তোলা, ত্বকের রঙে বদল আনাও সম্ভব। একে বলা হয় ‘ফোটোরিজ়ুভেনেশন’, অর্থাৎ, ত্বকের ক্ষতিকর কোষগুলির মেরামত করা। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির কারণে অথবা জন্মগত ভাবে অনেকের ত্বকেই দাগ, জরুল থাকে। সেগুলি তোলার জন্যও এই থেরাপি করা যায়।

ট্যাটু মোছার জন্য ‘এনডি: ইয়াগ’ লেজ়ার করানো যায়। শ্রাবণী বলছেন, ‘‘ভারতীয়দের ত্বকের জন্য এই লেজ়ার থেরাপি সুরক্ষিত।’’

আরও এক রকম লেজ়ার আছে, যা অনেকেই করাচ্ছেন। তা হল কার্বন ডাই-অক্সাইড লেজ়ার ট্রিটমেন্ট বা কার্বক্সি-থেরাপি। এ ক্ষেত্রেও ত্বকের দাগছোপ তোলা, ব্রণের কারণে ত্বকে ক্ষত বা গর্ত হলে তা-ও সারানো যায় এই থেরাপিতে। ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ানো যায় কার্বল ডাই-অক্সাইড লেজ়়ারে। চামড়া ঝুলে গেলে বা বলিরেখা পড়লে, ত্বক টান টান করার জন্যও এটি প্রয়োগ করা হয়।

ত্বক যেমনই হোক, পিক্সেল লেজ়ার সব ক্ষেত্রেই উপযোগী। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, শহরের ক্লিনিকগুলিতে পিক্সেল লেজ়ার করাচ্ছেন অনেকেই। ত্বকের কোনও অংশ রোদে পুড়ে গেলে অথবা মেলানিনের আধিক্য হলে রং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গাঢ় হয়ে যায়। মুখে কালচে বা বাদামি ছোপ পড়তে থাকে। এই অবস্থাকে বলে ‘হাইপারপিগমেন্টেশন’। পিক্সেল লেজ়ার এমন দাগছোপ তোলার জন্য খুবই উপযোগী। আবার স্ট্রেচমার্ক তুলতেও পিক্সেল করান অনেকে। ‘আরএফ মাইক্রোনিডলিং’ থেরাপিও করান কেউ কেউ। সূক্ষ্ম বলিরেকার দাগ, ব্রণের ক্ষত, স্ট্রেচমার্ক দূর হতে পারে এই থেরাপিতে। ত্বক টান টান ও মসৃণ হয়।

লেজ়ার করানোর আগে ও পরে নিয়ম মানুন

থেরাপির আগে

লেজ়ার থেরাপি করাবেন ভাবলে কিছু নিয়ম মানতেই হবে। যেমন যে জায়গা থেকে ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন, সেটি ঠিকঠাক কি না, সেখানকার কুলিং সিস্টেম ঠিকঠাক কি না, চিকিৎসক আগে পরীক্ষা করে পরামর্শ দিচ্ছেন কি না, তা দেখে নিতে হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী লেজ়ার হবে। আগে থেকে ত্বকের কোনও অসুখ থাকলে বা বিশেষ কোনও ওষুধ খেলে লেজ়ার করানো যাবে কি না, তা জেনে নিতে হবে।

লেজ়ার থেরাপি করানোর আগে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। কোনও রকম প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না।

এক সপ্তাহ আগে থেকে সুইমিং পুলের জলে নামা বন্ধ করে দিন।

বেশি ক্ষণ রোদে থাকবেন না। বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি।

থেরাপির পরে

১) লেজ়ার পদ্ধতিতে রোম তোলার পর আগামী ২-৩ সপ্তাহ ওয়াক্স বা সুতো দিয়ে রোম তোলার চেষ্টা করবেন না।

২) ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

৩) রোম তোলার পর ক্যালামাইনযুক্ত ক্রিম বা অ্যালো ভেরা জেল ব্যবহার করলে ভাল। তবে বেশি রাসায়নিক দেওয়া ক্রিম বা সাবান ব্যবহার করা যাবে না।

৪) লেজ়ার পদ্ধতি ব্যবহার করে রোম তোলার সঙ্গে সঙ্গেই জিমে যাবেন না। অন্ততপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পর শরীরচর্চা করতে হবে।

৫) গরম জলে স্নান করা যাবে না। তার জন্যও দু’দিন অপেক্ষা করতে হবে। না হলেই ত্বক পুড়ে গিয়ে দাগছোপ পড়ে যাবে।

৬) লেজ়ার থেরাপি করানোর পর অন্তত ৭-৮ দিন চড়া রোদে বেরোবেন না।

৭) খুব বেশি আঁটসাঁট পোশাক না পরাই ভাল, তা হলে ত্বকে অস্বস্তি হতে পারে।

আরও পড়ুন
Advertisement