গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
টি-শার্টের বুকে একটা হাতের ছবি। প্রতিবাদের স্লোগান দেওয়ার সময় হাত যে ভাবে মুঠো পাকানো থাকে, এ হাতও তেমনই দৃঢ় ভাবে মুঠো করা। হাতের কব্জিতে বড় বড় সাদা হরফে লেখা ‘আর কবে’? আরজি কর আন্দোলনের সমর্থনে ‘আর কবে?’ প্রশ্ন তুলে গান গেয়েছেন অরিজিৎ সিংহ। সেই গানের পঙ্ক্তি দিয়েই তৈরি হয়েছে টি-শার্ট। আরজি কর আন্দোলনের সমর্থনেই। তবে এমন টি-শার্ট শুধু ওই একটি নয়। আরজি কর আন্দোলনের আবহে পুজোর আগে বাজারে ঢল নেমেছে এই স্লোগান লেখা টি-শার্টের।
‘আরজি কর টি-শার্ট’ লিখে ইন্টারনেটে খোঁজ করলেই পাওয়া যাচ্ছে। আবার সমাজমাধ্যমের পাতাতেও দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপন। কোনও টি-শার্টে লেখা— ‘আর যাই কর, আর্জি করিস না, সময় এসেছে ছিনিয়ে নেওয়ার’। আবার কোনওটিতে লেখা, ‘আমার দুর্গা বিচার চায়’। ‘বিচার চাই’, ‘জাস্টিস ফর তিলোত্তমা’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর মতো স্লোগান দেওয়া টি-শার্ট বিক্রি হচ্ছে। আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও সম্প্রতি নিজের সমাজমাধ্যমে প্রচার করেছেন ওই টি-শার্টের। ‘আর কবে’ লেখা টিশার্টের ছবি দিয়ে অরিজিতের নাম করে লিখেছেন, ‘‘এটা একটা কাজের মতো কাজ হয়েছে।’’
তবে অনেকে এ-ও মনে করছেন, কাজটা মোটেই ‘কাজের মতো’ হয়নি। ফেসবুকে ওই টি-শার্টের ছবি দিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার বান ডেকেছে। আরজি কর আন্দালন নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ। টি-শার্টের ছবি-সহ ‘ছিঃ’ ক্যাপশন দিয়ে পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ফ্যাশন দুনিয়ার মানুষজনের পাল্টা প্রশ্ন, এতে আপত্তিটা কিসে?
আরজি কর আন্দোলনে চিকিৎসকদের পাশাপাশি পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পীরাও। গান, অভিনয় জগৎ, চিত্রশিল্পী সকলেই নিজেদের শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, জানাচ্ছেন। কেউ গান বাঁধছেন, কেউ হাতে তুলে নিচ্ছেন রং-তুলি। সে ক্ষেত্রে পুজোর আবহে ফ্যাশনেও যদি প্রতিবাদ জানানো হয়, তা হলে সমস্যাটা কোথায়? পোশাকশিল্পী অভিষেক রায় বলছেন, ‘‘কাউকে তো এমন জামা কিনতে জোর করা হচ্ছে না। কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সৃষ্টিশীল কিছু বানাতে চান, তাঁর সেটা বানানোর অধিকার আছে। তাঁকে কেন সমালোচনা করা হবে?’’
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের দেওয়া পুরস্কার এবং পুরস্কারের অর্থ ফিরিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। প্রতিবাদের টি-শার্ট প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘স্লোগান দেওয়া টি-শার্ট পরতে অসুবিধা কিসের? প্রতিবাদটাই তো আসল কথা। কেউ নিজের বাড়ির বাইরে লিখে রাখতে পারেন। কেউ পুজোর মণ্ডপে লিখে রাখতে পারেন। কেউ নিজের জামায় লিখে রাখতে পারেন। যে ভাবেই জানান, প্রতিবাদটা আদতে প্রতিবাদই। কেউ মুখে স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নামবেন, কেউ যদি নীরবে সুবিচারের স্লোগান লেখা টি-শার্ট পরেন, তাতে কার কী বলার থাকতে পারে!’’
টলিউডের আর এক অভিনেত্রী দর্শনা বণিকও স্লোগান লেখা টি-শার্ট পরতে রাজি। দর্শনা বলছেন, ‘‘টি-শার্ট তো আমরা ছবির প্রচারের জন্যও পরি। এখানে আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে দিতে যদি প্রয়োজন হয়, তবে কেন পরব না?’’ তবে টি-শার্টের মাধ্যমে আন্দোলন নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে বলে মনে করেন না তিনি। দর্শনার মতে, ‘‘আমার মনে হয় না যাঁরা ওই টি-শার্ট বানিয়েছেন, তাঁরা শুধু ব্যবসা করবেন বলে বানিয়েছেন। ব্যবসা করার জন্য তাঁরা অন্য যে কোনও নকশা বা স্লোগান বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু আমার মতে, তাঁরা শুধু সেটুকুই মাথায় রেখে কাজটা করেননি। তাঁরা হয়তো নিজেদের মতো করে আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন।’’
কিন্তু ব্যবসা কি সত্যিই হচ্ছে? কতটা বিক্রি হচ্ছে আরজি কর টি-শার্ট? কলকাতার সংস্থা ‘ব্রটমা’ আরজি কর আন্দোলনের আবহে বেশ কিছু টি-শার্ট এনেছে বাজারে। সংস্থার তরফে নির্মল দাগা জানাচ্ছেন, ‘‘প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, এমন নয়। তবে বিক্রি হচ্ছে না, তা-ও নয়।’’ হঠাৎ আরজি কর নিয়ে টি-শার্ট তৈরি করার কথা মনে হল কেন? নির্মল জানাচ্ছেন, ১৪ অগস্ট রাতে রাত দখলের কর্মসূচির পরেই তাঁর মনে হয়েছিল এই আন্দোলন জোরদার হতে চলেছে। যে ভাবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। তাই নিজের মতো করে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছেন। পোশাকের ব্যবসায়ী, অনলাইনে টি-শার্ট বিক্রি করেন। ফলে টি-শার্টকেই বেছে নিয়েছিলেন প্রতিবাদের মাধ্যম হিসাবে। তবে লাভের জন্য নয়। ন্যূনতম দামেই ওই টি-শার্ট বাজারে ছেড়েছেন তিনি। চিকিৎসকদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন দামে অতিরিক্ত ছাড়েরও।