শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি : ইনস্টাগ্রাম।
বাড়িতে বিয়ে, পুজো, অন্নপ্রাশন থাকলে সোনার গয়না পরা ছিল বাঙালি বাড়িতে অলিখিত নিয়ম। না পরলেই মা-জেঠিমাদের ধমক শুনতে হত। কারণ, সোনাকে শুভ মনে করতেন তাঁরা। পরে সোনার দাম যত বেড়েছে, ততই শুভ-অশুভের ভাবনা ছাড়তে হয়েছে। ছেলে-মেয়ে-দাদা-দিদি-আত্মীয়ের বিয়েতে এক গা সোনার গয়না পরায় ইতি টেনেছে বাঙালি। কিন্তু ইদানীং আবার নতুন করে সাবেকি সোনার সাজ ফিরছে ট্রেন্ডে। সোনার দাম যতই বাড়ুক, টলিউডের নায়িকাদের ওয়ার্ড্রোবে নজর দিলেই দেখা যাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সোনার সাবেকি নকশার হার-দুল পরছেন তাঁরা। অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কেই ধরুন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাননসই সোনার গয়না পরেন অভিনেত্রী। বিয়ের অনুষ্ঠান হোক, নিজের সাধ হোক, নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান হোক বা দশমীর দেবীবরণ— শুভশ্রী দিব্যি সোনার গয়না পরে হাজির হন। তাঁর সংগ্রহে যেমন বাঙালির চিরন্তর লহরী হার, সীতা হার, হাঁসুলির মতো সাবেকি নকশার নেকলেস রয়েছে, তেমনই রয়েছে দক্ষিণী মন্দিরের নকশাদার টেম্পল জুয়েলারিও। উত্তরাধিকার সূত্রে বা বিয়ের সময়ে পাওয়া এমন বহু পুরনো নকশার সোনার হার বাঙালির আলমারিতে থাকে। সামনে বিয়ের মরসুম। আত্মীয়-স্বজনের বিয়ের সাজে কেমন সোনার গয়না পরবেন, তা শুভশ্রীর থেকে শিখে নিতে পারেন।
১। হাঁসুলি
হাঁসুলি নানা রকমের হয়। তবে শুভশ্রী যেটি পরেছেন সেটি সোনার পাতে ফুল লতাপাতার জালি নকশা করা। এমন হার গলা জুড়ে থাকলে একাই একশো। বিয়ে বাড়ির গায়ে হলুদের সকালে সাদা শাড়ির সঙ্গে পরলে অন্য কোনও গয়নার প্রয়োজন নেই।
২। চিক নেকলেস
মরাল গ্রীবা হল সৌন্দর্যের মাপকাঠি। বাঙালি গয়নাপ্রেমীদের মধ্যে তাই চিক নেকলেসের কদর চিরকালীন। কারণ চিক পরলে ঘাড় বা গলার দৈর্ঘ্য লম্বা দেখায়। চিকের বৈশিষ্ট্য হল, এটি গলা থেকে ঝুলে থাকে না। শুভশ্রীর হারও ঝুলে নেই। সোনার ছোট ছোট বল জুড়ে তৈরি হয়েছে হার। মাঝের লকেটে পিঠোপিঠি দু’টি ময়ূর। সাবেকিয়ানা বজায় রেখেও হালকা সোনার গয়নার আদর্শ উদাহরণ।
৩। গলা জোড়া নেকলেস
এক নেকলেসের অনেকগুলি স্তর। প্রতিটি স্তরেই এক একটি হার। সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে জুড়েছে সোনার রিং দিয়ে। একেবারে শেষ পরতে রয়েছে সোনার বলের ঝুমকো। প্রায় এক আঙুল চওড়া ওই নেকলেস শুভশ্রী পরেছেন হালকা ক্রিম রঙের শাড়ি আর কান টানা ঝুমকোর সঙ্গে।
৪। টেম্পল জুয়েলারি
ভারী গহনা, তবে নকশা বাঙালি নয়, দক্ষিণী। নাম টেম্পল জুয়েলারি। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের দেওয়ালে নানা রকম নকশা থাকে। মন্দিরের সেই সব নকশা থেকে অনুপ্রাণিত বলেই গয়নার নাম টেম্পল, অর্থাৎ মন্দির। দক্ষিণী মন্দিরের নকশা দেওয়া শুভশ্রীর হারটি লম্বা ঝুলের। ছোট ছোট গোল ছাঁচ পর পর এসে জুড়েছে বড়সড় একখানা লকেটে। যেটি শাড়ির উপর দিয়ে ঝুলছে বুকের মাঝ বরাবর।
৫। সীতা হার ও জাল নেকলেস
সিঁদুর খেলার জন্য দু’রকম হার একসঙ্গে পরেছেন অভিনেত্রী। জাল নেকলেস অনেকটা গলা জুড়ে থাকলেও ওজনে হালকা। ছোট ছোট চেন পাশাপাশি জুড়ে তৈরি করছে মাকড়সার জালের মতো নকশা। তাই জাল নেকলেস। সঙ্গের সীতাহারটি জড়োয়ার। চার হালি ছোট মুক্তোর মালার সঙ্গে ছোট ছোট সোনার নকশাদার গিনির সঙ্গে অর্ধেক হাঁসুলির মতো নকশাদার লকেট। বিয়ে বাড়িতে অবশ্য সাজ বুঝে যে কোনও একটিও পরা যেতে পারে।
৬। লহরী নেকলেস
সাধের দিন পাতলা সিল্কের হলুদ বেনারসির সঙ্গে লহরী হার পরেছেন শুভশ্রী। বাংলার চিরন্তন ওই নকশার বিশেষত্ব হল তিনটি বা চারটি সরু চেনের পরত ঢেউয়ের মতো একটার উপর আরও একটা পড়ে থাকে। প্রতিটি চেনে ঝুমকোর মতো ঝুলে থাকে সোনার পাতা বা বল বা ফুলের নকশা। সকালে ভারী গয়না না পরে জমকালো সাজতে চাইলে এমন হার আদর্শ।