বাড়াবাড়ি রকমের ঘামাচি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। ছবি: শাটারস্টক
তাপমাত্রার পারদ দিন দিন বাড়ছে। ভ্যাপসা গরমের হাত কবে নিষ্কৃতি মিলবে, কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে রাজ্যে, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি হাওয়া অফিস। তীব্র রোদে ঘামেভেজা জামাকাপড় থেকে ত্বকের নানা সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
ঘাম হলে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। তাই ঘাম হওয়া ভাল। শরীরের চাপা অংশে ঘাম জমে থাকলে ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ঘামের সঙ্গে ত্বকের যে সমস্যা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে তা হল ঘামাচি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঘামাচিকে বলে মিলিয়ারিয়া। ভ্যাপসা গরমে ঘাম ও ঘামাচির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঘাম প্রতিরোধ করতে অনেকেই পুরু করে পাউডার লাগান। এর থেকে কিন্তু ঘামাচি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ে। পাউডার লাগানোর ফলে যে গ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসরণ হয়, অতিরিক্ত ঘাম জমে বা পাউডার-সহ ময়লা জমে সেই মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘাম বাইরে বেরোতে পারে না। ঘর্ম গ্রন্থির মধ্যে ঘাম জমতে শুরু করে। এর পর তা বাইরে বেরিয়ে আসে ঘামাচি বা র্যাশ হিসাবে।
বাড়াবাড়ি রকমের ঘামাচি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। পাউডার লাগিয়েই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। ঘামাচিগুলিতে নখের আঁচড় লেগে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। ত্বকের ঘামাচি বা র্যাশের চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে ক্যালামিনল জাতীয় লোশন লাগাতে হবে। এই সময়ে বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এই গরমে শুধু ঘামাচিই নয়, ছত্রাক-সহ অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণেরও ঝুঁকি থাকে। নিয়ম করে দিনে দু’বার স্নান করে ও সুতির পোশাক পরলে ত্বক ভাল থাকে। ভ্যাপসা গরমে ঘাম জমে ত্বকের ওপর কালো, বাদামি বা সাদাটে ছোপ দেখা যেতে পারে। এ সব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছুলি হতে পারে। কমবয়সিদের মধ্যে ছুলির সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘামেভেজা শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই ঘাম জমতে দেবেন না। তবে অনেক সময়ে স্টেরয়েড নিলে, ডায়াবিটিস থাকলে, কোনও গুরুতর অসুখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে এবং অপুষ্টিতে ভুগলেও ছুলির সংক্রমণ হতে পারে। মুখে, গলায়, ঘাড়ে, পিঠে ছুলি বেশি দেখা যায়। ছুলির সংক্রমণ হলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা করান । সাধারণত ছুলিতে কোনও ব্যথা অথবা জ্বালা থাকে না। কিন্তু ছুলির সঙ্গে অন্য কোনও সংক্রমণ হলে চুলকানি হতে পারে। গরম থেকে বাড়ি ফিরে হালকা সাবান মেখে স্নান করা উচিত। ছুলি-আক্রান্ত অংশে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা জীবাণু তাড়াতে অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে হবে।
গামছা বা তোয়ালে এবং চিরুনি থেকেও ত্বকের জীবাণুঘটিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিত আলাদা জিনিস ব্যবহার করা। ভ্যাপসা গরমে অ্যালার্জি-সহ ত্বকের র্যাশ ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আঁটসাঁট অন্তর্বাস ও পোশাক থেকেও ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে। গরমে সুতির অন্তর্বাস পরাই শ্রেয়।
ত্বকে সংক্রমণ হলে নিজে থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম কিনে লাগিয়ে বিপদ বাড়াবেন না। ফরসা হওয়ার বাসনায় অনেকে স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম মাখেন। এতে সাময়িক ভাবে চকচকে মনে হলেও ত্বক অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মনে রাখবেন ত্বক ভাল রাখার সেরা উপায় হল পরিচ্ছন্নতা। গরমে সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে একেবারেই বেরোবেন না। হালকা সুতির পোশাক ও নিয়মিত মৃদু সাবান মেখে স্নান ত্বক ঝকঝকে রাখার আসল চাবিকাঠি। ত্বক ভাল রাখতে পুষ্টিকর খাবার খান ও পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।