সেরার সেরা ফ্যাশন মুহূর্ত। ছবি: শাটারস্টক।
২০২০-২১ সালটা ফ্যাশন জগতেও তার প্রভাব ফেলেছিল। কোভিডের কারণে ছোট-বড় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে ফ্যাশন শো, কিছুই সে ভাবে আয়োজন করে ওঠা হয়নি! সিনেমার ক্ষেত্রেও ছিল মন্দার ছাপ। তবে ২০২২ সালটা ছিল কিন্তু বেশ জমজমাট! হলিউড থেকে বলিউড— চারদিকেই ফ্যাশনিস্তাদের জমকালো উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো! ২০২২ সালে ফ্যাশন দুনিয়ায় এমন কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়েছে, যা মনে থাকবে বহু দিন! আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে বর্ষসেরা ফ্যাশন মুহূর্ত কোনগুলি? দেখে নিন বছরের সেরা পাঁচটি মুহূর্তের ঝলক!
রণলিয়ার বিয়ের ঝলক: এই বছরের সবচেয়ে চর্চিত বিয়েটি হয়েছিল ১৪ এপ্রিল। রণবীর কপূরের পৈতৃক বাড়ি ‘বাস্তু’তেই চারহাত এক হয় রণবীর ও আলিয়া ভট্টের। কেমন হবে বিয়ের সাজ, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। বিয়ে হওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছিল বিয়ের সাজে নবদম্পতির ঠোঁটে ঠোঁট রাখার ছবি! পোশাকশিল্পী বলিউডের প্রিয় সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ই। কিন্তু অন্য বলিউডি কনের চেয়ে আলিয়ার সাজ ছিল স্বতন্ত্র। লাল, গোলাপি, কমলা লেহঙ্গার বদলে হাতে রং করা আইভরি রঙের অরগ্যাঞ্জা শাড়ি বেছে নিয়েছিলেন তিনি। গোটাপাট্টির কারুকাজের বদলে শাড়ি এবং হাতে বোনা টিস্যু ওড়নায় ছিল সোনালি জড়ি এবং চুমকির কাজ। সেই সুতোর টানে বিয়ের প্রজাপতি ফুটে উঠেছিল আলিয়ার লেহঙ্গায়। মাথায় ছিল মাথাপট্টি। কিন্তু চুল খোলা। বলিউডি বিয়ের ধারা মেনে শুধু আলিয়া ভট্ট নয়, রণবীর কপূরও সেজেছিলেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের পোশাকে। এ দিন রণবীরের পরনে ছিল সিল্কের শেরওয়ানি এবং কারুকাজ করা সিল্কের অরগ্যাঞ্জা শাল। দু’জনেই পরেছিলেন হিরে এবং মুক্তো বসানো গয়না। রণলিয়ার সাজপোশাক ছিল সত্যিই মনে থাকার মতো!
মেরিলিন মনরোর পোশাকে কিমের ঝলক: সালটা ছিল ১৯৬২। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির ৪৫তম জন্মদিনে গান গাওয়ার সময়ে একটি ঝলমলে পিঠ খোলা ন্যুড পোশাক পরে সকলের নজর কেড়েছিলেন দেশের নামী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো। মেরিলিনের সেই পোশাক নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না! ২০২২-এর মেট গালায় মেরিলিনের সেই ঐতিহাসিক পোশাক জাদুঘর থেকে বার করে গায়ে জড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন কিম কার্দাশিয়ান। শোনা যায়, সে সময়ে এ ধরনের পোশাক নিয়ে ছুতমার্গের অন্ত ছিল না আমেরিকায়। প্রেসিডেন্টের জন্মদিনের সম্প্রচারকারী সংস্থাও তীব্র আপত্তি করেছিল তার এই পোশাকটি নিয়ে। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সে সব আপত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফরাসি পোশাকশিল্পী জিন লুইসের তৈরি পোশাকটি পরে মঞ্চে ওঠেন মেরিলিন। তার পর এই গাউনটি রাখা ছিল অতি যত্নে। আমেরিকার একটি জাদুঘর ২০১৬ সালে ৪৮ লক্ষ আমেরিকান ডলারে কিনে নেয় পোশাকটি। ভারতীয় মুদ্রায় তখন তার বাজারমূল্য ৩৬ কোটি টাকা। সে সময় থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা ও ৪৫ শতাংশ আর্দ্রতায় অন্ধকার একটি ঘরে রক্ষিত ছিল পোশাকটি। হাতমোজা ছাড়া ধরাও যেত না। মেট গালায় পরার জন্য জাদুঘর থেকে পোশাকটি ধার করেন কিম। পোশাকটি পরতে কিম ৭ কেজি ওজন ঝরিয়েছিলেন।
বেলা হাদিদের স্প্রে ড্রেসের ঝলক: ২০২২-এর প্যারিস ফ্যাশন উইকে আমেরিকার জনপ্রিয় মডেল বেলা হাদিদের এক কীর্তি বেশ নজর কাড়ে ফ্যাশনপ্রেমীদের। কেবল অন্তর্বাস পরেই মঞ্চে হেঁটে আসেন বেলা! বক্ষযুগলে ছিল না কাপড়ের টুকরোও। হাত দিয়ে লজ্জা ঢেকেছিলেন তিনি। মঞ্চেই তাঁর উপর সাদা ল্যাটেক্স স্প্রে করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেই ল্যাটেক্স সাদা ড্রেসে পরিণত হয়। অফ শোল্ডার, হাই রাইস কাট সেই ড্রেসটি পরে সামনের দিকে এগিয়ে আসে বেলা। বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে চেয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ!
বিপাশার মাতৃত্বকালীন ফোটোশুটের ঝলক: সাদা শার্টের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে স্ফীতোদর। আর যত্ন সহকারে হাত দিয়ে আগলে হবু বাবা কর্ণ। এই মিষ্টি ছবি নেটমাধ্যমে ভাগ করে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা অনুরাগীদের জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী বিপাশা বসু। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একাধিক বার ফটোশুট করেন অভিনেত্রী। চেহারা নিয়ে শুনতে হয় নানা কটাক্ষ! চেহারা যেমনই হোক, নিজস্বতাই সৌন্দর্য। ব্রোঞ্জ রঙের চেরা গাউনে মাতৃত্বের রূপ মেলে ধরে সেই বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী বিপাশা বসু। শরীরে গাউন জড়ানো থাকলেও নিম্নাঙ্গ অনাবৃত। বিপাশার এই ছবি নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নেটাগরিকদের একাংশে শুরু হয় প্রবল নিন্দা! হবু মায়ের এ কী অশ্লীল রূপ, সুর চড়াতে শুরু করেন তাঁরা!
কান চলচ্চিত্র উৎসবে শাড়িতে দীপিকার ঝলক: কান চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক বার লাস্যময়ী চেহারায় ধরা দিয়েছিলেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। তবে এই বছরটি ছিল আলাদা। অতিথি নয়, এ বার বিচারকের আসনে প্রথম বার জায়গা করে নেন অভিনেত্রী। কানের লাল গালিচায় সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের নকশা করা শাড়িতে রেট্রো লুকে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন দীপিকা। কালো ও সোনালি রঙের ডোরাকাটা চুমকির নকশা করা শাড়িতে নজর কাড়েন অভিনেত্রী। ব্রালেটের সঙ্গে সেই শাড়ির মেলবন্ধন ছিল চোখে পড়ার মতো। চড়া মেকআপ, মোটা করে টানা আইলাইনার, বান হেয়ার স্টাইল, সোনালি হেয়ার ব্যান্ড, কানে সব্যসাচীর নকশা করা ভারী দুল— দীপিকার সাজে ছিল ষাটের দশকের নায়িকাদের ছোঁয়া! পরনে শাড়ি, হাসিমুখে করজোড়ে নমস্কার, কান চলচ্চিত্র উৎসবে দীপিকার খাঁটি ভারতীয় রূপ ছিল সত্যিই অনবদ্য!