Chikan saree

রাজকীয় আভিজাত্যে চিকনের রোশনাই

কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে লেডিস স্টাডি গ্রুপ আয়োজিত ফ্যাশন শোয়ে নিজের নতুন কালেকশন দেখালেন মুজ়াফ্ফর। কোতওয়ারার রাজপরিবারের সংস্কৃতি কতটা প্রভাবিত করেছে আপনার ফ্যাশন শিল্পকে?

Advertisement
পারমিতা সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
ফ্যাশন শো।

ফ্যাশন শো। ছবি: সর্বজিৎ সেন   

ইন আখোঁ কী মস্তি কে মস্তানে হাজ়ারো হ্যায়... গানের মাদকতায়, আলো-আঁধারি র‌্যাম্পের রহস্যময়তায় মার্জার গতিতে হেঁটে চলেছেন মডেলরা। চিকনকারি, জারদৌসি, আরীর সূক্ষ্ম কাজে আভিজাত্য ফুটে উঠেছে তাঁদের পরনের লেহঙ্গা, শরারা, শাড়িতে। মুজ়াফ্ফর আলি নামের সঙ্গে যতটা জড়িয়ে ‘উমরাও জান’, ততটাই লখনউয়ের সংস্কৃতি এবং চিকন। ফ্যাশন ডিজ়াইনার, চিত্রপরিচালকের পরিচিতির সমান্তরালে তাঁর বিচরণ কবিতা, আঁকা এবং ভূতত্ত্ববিদ্যায়। লখনউয়ের কোতওয়ারার রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের বাচনে, রুচিতে, চলনে রাজকীয় সংস্কৃতির উন্মোচন।

কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে লেডিস স্টাডি গ্রুপ আয়োজিত ফ্যাশন শোয়ে নিজের নতুন কালেকশন দেখালেন মুজ়াফ্ফর। কোতওয়ারার রাজপরিবারের সংস্কৃতি কতটা প্রভাবিত করেছে আপনার ফ্যাশন শিল্পকে? শো শেষে চেয়ারে এলিয়ে বসে তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘‘গোড়ার কথা বলতে হলে বাবার কথা বলব। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অসাধারণ মিশ্রণ ওঁর সাজপোশাকে। উনি খুব সুদর্শন ও শৌখিন ছিলেন, বড় হয়েছিলেন এডিনবরায়। ওঁর রুচি, ফ্যাশন সেন্স আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। পরে সব ছেড়েছুড়ে খাদিকে আপন করে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাও পরতেন সুন্দর ভাবে। আমার মা খুব সুন্দর সেলাই করতেন। বাড়িতে সেলাই করে ছোট ছোট জিনিস বানাতেন... এই সব কিছুই আমার জন্য একটা জানালা খুলে দিয়েছিল। লখনউয়ের ফিউডাল কালচারও ভাবনায় রসদ জুগিয়েছিল।’’

Advertisement

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে চিকনের গুরুত্ব কতখানি? ‘‘চিকনের কাজ করা হয় মূলত সুতির উপরে। লখনউতেই হাজার হাজার মহিলা একটা সুচ ও সুতোয় ভর করে এই শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। এটা সংগঠিত নয়, কিন্তু বিরাট বড় ক্ষেত্র। ভাগ্যক্রমে চিকন আমাদের প্রাত্যহিকতার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। পর্দা থেকে শুরু করে টেবল ম্যাট, কোস্টার, বালিশের কভার... কী না তৈরি হয় চিকন দিয়ে! এতটা নমনীয়তা খুব কম শিল্পেরই আছে,’’ চিকনের জাদুকর এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রত্যয়ী।

পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয় চিকন। মুজ়াফ্ফরের মতে, চিকন যে কোনও জায়গায় তৈরি হতে পারে, কিন্তু তার জন্য একটা সংস্কৃতিও দরকার— ফুল-পাতার অভিনিবেশ, যার দেখা মেলে লখনউ, অওয়ধে। ‘‘৩৬ টাকে (সেলাই) আপকো সির্ফ লখনউ মে মিলেগা,’’ বুঝিয়ে দিলেন তিনি। চিকন তো চিরকালীন, তা হলে হাউস অব কোতওয়ারা কী ভাবে আলাদা? ‘‘ভিন্ন শিলুয়েট, বিভিন্ন ধরনের সুতোর ব্যবহারের পাশাপাশি কখনও চিকনের সঙ্গে মোকেশ, কখনও জ়ারদৌসি বা আরী কাজ মেশাই, যেটা অন্য জায়গায় সচরাচর পাবেন না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই কাজগুলো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। মেনসওয়্যারের উপরে কাজ করছি খুব ডিটেলে। লাইফস্টাইল রেঞ্জও শুরু করেছি,’’ বললেন আশি ছুঁতে চলা উৎসাহে ভরপুর সুঠাম দেহের ‘যুবা’।

কলকাতায় তিনি বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন এক কালে। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে একই অ্যাড এজেন্সিতে চাকরিও করেছেন। ‘‘ওঁর সেন্স অব ডিটেলিং, সেন্স অব প্রিপারেশন, সেন্স অব প্ল্যানিংয়ের কোনও তুলনা নেই। কলকাতায় থাকার সময় সুভাষদা (মুখোপাধ্যায়) এবং আমি নিয়মিত ওঁর বাড়িতে যেতাম। বরুণও (চন্দ) যেত, ও তো আজও আমার শো-তে এসেছিল।’’ এহেন মানুষের সিনেমা হোক বা ফ্যাশন, শিল্পবোধ সব সময়ে থেকেছে প্রথম সারিতে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ‘উমরাও জান’-এর পরিচালক মনে করেন, ‘‘হিন্দি ফিল্মস টুডে হ্যাজ় নো ভিসুয়াল অ্যাপিল’’! সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্য দৃঢ়, ‘‘এখন কেউ ডিটেলে গিয়ে ভাবে না। প্রোডাকশন ডিজ়াইনে কেউ প্রশিক্ষিত নয়। এটা জানা খুব জরুরি একটা নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গায় কী ঘটেছিল এবং ক্যারেক্টারিস্টিকস অব দ্য ন্যারেটিভ। তার পর তাকে কল্পনায় রাঙিয়ে তুলুন ভিসুয়াল মেটিরিয়াল দিয়ে। কিন্তু এখন তো ইতিহাস বোধটাই কারও নেই। কেউ জানে না কে ভিলেন, কে হিরো!’’ ছবি তৈরির কথা ভাবেন না? ‘‘খুবই ইচ্ছে করে। কিন্তু যার ছবি বানানোর ইচ্ছে আছে, তার টাকা নেই,’’ দরাজ হাসি ছ’ফুট দু’ ইঞ্চির মানুষটির মুখে।

আরও পড়ুন
Advertisement