‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রিমিয়ারে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেতা অল্লু অর্জুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
তেলুগু অভিনেতা অল্লু অর্জুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে তাঁর নতুন ছবি ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’-এর প্রিমিয়ারে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় অল্লুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে চিক্কাদপল্লি থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। ৫ ডিসেম্বর ‘পুষ্পা ২’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। তার পর থেকে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। কিন্তু দক্ষিণের প্রথম সারির এই অভিনেতাকে কেন গ্রেফতার করল পুলিশ? হায়দরাবাদের প্রেক্ষাগৃহে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ভূমিকা কী ছিল? একাধিক ধারার উল্লেখ করা হয়েছে এফআইআরে।
হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে ৪ ডিসেম্বর যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর নাম রেবতী (৩৯)। তাঁর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করেছে পুলিশ। ওই এফআইআরের কপি অনুযায়ী, অভিযোগকারীর নাম ভাস্কর মাগুদামপল্লি। তিনি তাঁর স্ত্রী, ন’বছরের পুত্র এবং আট বছরের কন্যাকে নিয়ে ‘পুষ্পা ২’-এর প্রিমিয়ার উপলক্ষে সন্ধ্যা থিয়েটারে গিয়েছিলেন। অভিযোগপত্রে ভাস্কর জানিয়েছেন, রাত ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ তাঁরা টিকিট কেটে ছবি দেখতে হলে ঢুকেছিলেন। প্রেক্ষাগৃহে ছিল থিকথিকে ভিড়। রাত ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ অল্লু প্রেক্ষাগৃহে আসেন। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ। অভিনেতার নিরাপত্তারক্ষীরা ভিড় সরানোর চেষ্টা করেন। এই সময় ধাক্কাধাক্কি হয়। রেবতী এবং তাঁর পুত্র সাই তেজ প্রেক্ষাগৃহের নীচের ব্যালকনিতে ছিলেন। তাঁরা শ্বাস নিতে পারছিলেন না। দমবন্ধ হয়ে আসছিল মা এবং পুত্রের। দু’জনেই ভিড়ের মধ্যে পড়ে যান। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রেবতীর মৃত্যু হয়। শিশুটিকে দুর্গাবাই দেশমুখ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নিয়ে যাওয়া হয় কেআইএমএস হাসপাতালে। অভিযোগ, আগে থেকে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থা ছাড়াই অভিনেতা হলে চলে এসেছিলেন। প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষও ভিড় নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত করেননি। এর ভিত্তিতে পুলিশকে পদক্ষেপের অনুরোধ করেন মৃতের স্বামী।
অভিযোগের ভিত্তিতে অল্লু, নিরাপত্তারক্ষী-সহ তাঁর টিম এবং সন্ধ্যা থিয়েটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর করে হায়দরাবাদ পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৫, ১১৮ (১), ৩ (৫) ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৫ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের কথা বলা রয়েছে। ১১৮ (১) ধারায় অস্ত্রের মাধ্যমে (যন্ত্র, আগুন, ক্ষতিকর গ্যাস, বিষ ইত্যাদি) মৃত্যু ঘটানোর কথা বলা রয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, অল্লু কখন কোথায় ছবির প্রিমিয়ারের জন্য যাবেন, পুলিশকে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি তাঁর টিম। প্রেক্ষাগৃহের তরফেও পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি। আচমকা সন্ধ্যা থিয়েটারে বুধবার পৌঁছে যান তিনি। ওই প্রেক্ষাগৃহের সামনে ‘পুষ্পা ২’-এর প্রিমিয়ার উপলক্ষে এমনিতেই ভিড় ছিল। অভিনেতা স্বয়ং উপস্থিত হওয়ায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায় দর্শকদের মধ্যে। অল্লুকে এক ঝলক দেখার জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। অল্লুর মতো প্রথম সারির অভিনেতার নিরাপত্তা কিংবা ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বাড়তি কোনও বন্দোবস্তই করেননি প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। অভিনেতা এবং তাঁর টিমের প্রবেশ কিংবা প্রস্থানের জন্য আলাদা কোনও দরজার ব্যবস্থাও ছিল না। অভিনেতার সঙ্গেই দর্শকেরাও হলে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা জনতাকে ধাক্কা মারেন। ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। আগেই অল্লুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তার পর সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োর মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছিলেন অভিনেতা। মৃতের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করেছিলেন। সেই মামলায় এ বার তাঁকে গ্রেফতার করা হল।