এনসিপির চার প্রধান নেতা— সুপ্রিয়া সুলে, ছগন ভুজবল, শরদ পওয়ার এবং অজিত পওয়ার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি দলের নেতৃত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার পর থেকেই এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের মুম্বইয়ের বাড়ি ‘সিলভার ওক’-এর সামনে অনুগামীদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। আনাগোনা শুরু হয়েছে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের। মঙ্গলবার শরদের ভাইপো অজিত জানিয়েছিলেন, দলীয় নেতাদের আবেদন শুনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দু-তিন দিন সময় চেয়েছেন শরদ। কিন্তু এনসিপির অন্দরে ‘আশঙ্কা’ তাতে কমছে না।
এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ এনসিপি নেতা ছগন ভুজবল বুধবার শরদের সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁর বাড়িতে। আর সেখান থেকে বেরিয়ে দলীয় নেতৃত্বে ‘সম্ভাব্য পরিবর্তনের’ কথা জানিয়েছেন তিনি। ছগনের দাবি, শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে দলের পরবর্তী সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব পেতে পারেন। আর অজিত পেতে পারেন মহারাষ্ট্রের দায়িত্ব।
ছগন বুধবার বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র দেখার জন্য অজিতভাই রয়েছেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে শরদজি যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন, তা পালনের জন্য এক জনকে চাই। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিয়াই সকলেই পছন্দ। তিনি দীর্ঘ দিনের সাংসদ। বাবার সঙ্গে থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন।’’ যদিও মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা পদে থাকা অজিতের হাতে সে রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্বও শরদ তুলে দেবেন কি না, তা নিয়ে এনসিপি নেতৃত্বের একাংশের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
অজিত-ঘনিষ্ঠ এনসিপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল পটেলও বুধবার শরদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেউই জানতাম না যে উনি এ ভাবে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করবেন। আমি ওঁকে বলেছি, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য দু-তিন যথেষ্ট নয়। আরও সময় নিন।’’ শরদের এনসিপি সভাপতি পদ ছাড়ার পরে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদাধিকারী এবং জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগের যে হিড়িক পড়েছে, তা বন্ধ করার জন্য স্বয়ং শরদ আবেদন জানিয়েছেন বলেও দাবি প্রফুলের। যদিও সেই আবেদনে কতটা সাড়া মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বুধবার শরদ ঘনিষ্ঠ বিধায়ক তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র অওয়াড় এবং শোলাপুর জেলা এনসিপির সভাপতি ভূষণ বঘেল পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে লোকসভা ভোটের আগে দলের নেতৃত্ব তিনি ছাড়বেন না। সব স্তরের নেতা-কর্মীদের নিরঙ্কুশ আনুগত্য পেতেই কুশলী মরাঠা রাজনীতিক এই পদক্ষেপ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ‘নিশানা’ নিজের ভাইপো। কারণ, কিছু দিন ধরেই জল্পনা কাকাকে ছেড়ে বেশ কিছু এনসিপি বিধায়ককে নিয়ে আবার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছেন অজিত।
গত সেপ্টেম্বরে এনসিপির জাতীয় অধিবেশনে দলের সভাপতি হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন শরদ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে দিন মাঝপথেই তিনি বৈঠক ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অজিত। তার পর থেকেই দু’জনের সমীকরণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এনসিপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, শরদ চান কন্যা সুপ্রিয়ার হাতে দলের কর্তৃত্ব তুলে দিতে। কিন্তু অজিত শিবির তা মানতে নারাজ।