গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সই না করে রাজ্যপাল তিন বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখে ফেরত পাঠাতে পারেন কি না, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবির ওই পদক্ষেপের সমালোচনা করে এর পর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘তামিলনাড়ু বিধানসভা আবার ১০টি বিল পাশ করিয়েছে। দেখা যাক রাজ্যপাল এ বার কী পদক্ষেপ করেন।’’
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় বার বিধানসভায় পাশ করানো বিল যে ‘অর্থ বিল’ হিসাবে বিবেচনা করতে হয় (অর্থাৎ, রাজ্যপাল তা আবার বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন না।) সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘তিন বছর ধরে রাজ্যপাল কী করছিলেন।’’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার পরেও তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল সই না করেই ফেরত পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল রবি। গত সপ্তাহে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে ফের বিলগুলি পাশ করিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। যে ১০টি বিল বিধানসভায় ফের পাশ করানো হয়েছে, তার মধ্যে ২০২০ সালে দু’টি, ২০২২ সালে ছ’টি এবং ২০২৩ সালে আরও দু’টি বিল সই না করে রাজ্যপাল আটকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছে শাসক ডিএমকে। এর মধ্যে দু’টি বিল পূর্বতন এডিএমকে সরকারের আমলে পাশ করানো হয়েছিল বিধানসভায়।
বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালের আটকে দেওয়া নিয়ে পঞ্জাব সরকারের একটি মামলায় গত ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে রাজ্যপালের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিল, রাজ্যপাল এ ভাবে কাজ করতে পারেন না। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করছে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় রাজ্যগুলিকে বিপাকে ফেলতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন কেন্দ্রের নিয়োগ করা প্রতিনিধি অর্থাৎ রাজ্যপাল।
পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ)-র মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মানের সরকার সে রাজ্যের রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা বানোয়ারীলাল পুরোহিতের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে নালিশ করেছিল, বিধানসভায় পাশ হওয়া বেশ কয়েকটি বিল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছেন। গত ১০ নভেম্বর পঞ্জাবের রাজ্যপালের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন। এক জন রাজ্যপাল কী ভাবে এমন করতে পারেন? পঞ্জাবে যা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি নই। আমরা কি সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রাখব?’’
পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব— সর্বত্রই বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্দেশে বহু ক্ষেত্রেই এক্তিয়ার-বহির্ভুত ভাবে রাজ্য সরকারের কাজে নাক গলাচ্ছে রাজভবন। আর রাজ্য সরকার বনাম রাজভবনের এই সংঘাতে বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতাও তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘রাজ্যপালদের সামান্য একটু আত্মানুসন্ধান করা জরুরি। তাঁদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যপাল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। বিধানসভা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তাকে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি।’’