(বাঁ দিকে) মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুত। সৌরভের স্ত্রী মুস্কান রস্তোগী এবং তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্ল (ডান দিকে উপরে)। সৌরভের দেহ ভরা হয়েছিল যে ড্রামে (ডান দিকে নীচে)। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের মেরঠে মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতের হত্যার ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত প্রকাশ্যে আসছে তাঁর স্ত্রী মুস্কান এবং স্ত্রীর প্রেমিক সাহিল শুক্লর নানা কীর্তি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ৪ মার্চ রাতে স্বামীকে হত্যার পর তাঁর দেহাংশ নিজের সঙ্গে রেখেই ঘুমিয়েছিলেন মুস্কান। শুধু কাটা মুন্ডু এবং হাতগুলি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমিকের বাড়িতে। সৌরভের মুন্ডু এবং কাটা হাত অন্তত ২৪ ঘণ্টা সাহিলের নিজের ঘরে ছিল। ধড় এবং বাকি দেহাংশ রাখা ছিল মুস্কানের ঘরে। নিজের খাটের বাক্সে দেহাংশ ভরে তার উপরেই ঘুমিয়েছিলেন তরুণী। পরে প্রেমিকের সাহায্যে একটি প্লাস্টিকের ড্রামে স্বামীর দেহাংশগুলি তিনি ভরে ফেলেন। ড্রাম ভরাট করে দেন সিমেন্ট দিয়ে।
৩২ বছরের সৌরভ লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছিলেন স্ত্রী এবং ছ’বছরের কন্যা পিহুর জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু সেই সময়েই তাঁকে হত্যা করেন মুস্কান এবং সাহিল। তাঁদের মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ‘পথের কাঁটা’ সৌরভকে তাই সরাতে চেয়েছিলেন মুস্কান। সৌরভকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ এবং মাদক খাইয়েছিলেন তিনি। স্বামী ঝিমিয়ে পড়লে প্রেমিককে ডেকে নেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক বার সৌরভের বুকে কোপ মারেন তাঁরা। সৌরভের মৃত্যুর পর শৌচালয়ে দেহ নিয়ে গিয়ে তা টুকরো টুকরো করে কাটেন। ১৫টি টুকরোয় সৌরভের দেহ ভাগ করা হয়েছিল। দেহাংশগুলি পরে ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢেলে দেন তাঁরা। তার পর ঘুরতে চলে যান শিমলায়।
শিমলা থেকে ফেরার পর মুস্কান এবং সাহিলকে গ্রেফতার করেছে মেরঠ পুলিশ। সৌরভের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অন্তত দু’সপ্তাহ আগে তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁর দেহ গরম সিমেন্ট ঢেলে গলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মুস্কানেরা। অনেকাংশে সেই চেষ্টা সফলও হয়। তাঁর দাঁতগুলি আলগা হয়ে পড়েছিল। খুলে এসেছিল কোনও কোনও অংশের চামড়া।
জেরার মুখে স্বামীকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন মুস্কান। কী ভাবে কী কী করেছিলেন, বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনিই জানিয়েছেন, তাঁর ঘরে বাক্স খাট ছিল। সেই বাক্সেই সৌরভের দেহ রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মুন্ডু এবং হাত শেষ মুহূর্তে প্রেমিকের বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। গোটা ঘটনার সময়ে তাঁর কন্যা পাশের ঘরেই ঘুমোচ্ছিল। শিমলা যাওয়ার আগে কন্যাকে নিজের বাপের বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন মুস্কান।
মেয়ের কীর্তিতে হতবাক মুস্কানের বাবা-মা। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে যা করেছেন, তার কোনও ক্ষমা হয় না। মেয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সর্বস্ব দিয়ে জামাই মুস্কানকে ভালবেসেছিলেন। স্ত্রীর পাশে থাকতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিজের পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে থাকতেন ভাড়াবাড়িতে। পরে সংসারের প্রয়োজনেই চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। সেই ভালবাসার দাম দিতে পারেননি তাঁদের কন্যা।