উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরের শেষে পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে বাঁধা থাকবে। যা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ঊর্ধ্বসীমার মধ্যে। কেন্দ্রীয় সরকারও ৪ শতাংশ ঘাটতি রাখতে সম্মতি দিয়েছে।
বেনজির অর্থনৈতিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা ছবি পিটিআই।
পশ্চিমবঙ্গের নানা রকম জনমোহিনী প্রকল্পের ধাক্কায় রাজ্যের কোষাগারের বেহাল দশা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবরা মনে করছেন। সরকারি সূত্রের দাবি, সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবদের বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। সচিবরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কিছু রাজ্য সরকার যে ভাবে আমজনতার মন জিততে টাকা খরচ করছে, তাতে অনেকের হাল শ্রীলঙ্কা বা গ্রিসের মতো হতে পারে।
সরকারি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও পঞ্জাব, দিল্লি, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশের কোষাগারের হাল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবরা উদ্বিগ্ন। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাসের মতো প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছে। তার পরে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে রাজ্যের বাজেটে চাপ পড়ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের নাম উঠে এলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবরা কেন কেন্দ্রের কোষাগার ছেড়ে রাজ্যের কোষাগার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন, তা তাঁদেরই জিজ্ঞাসা করা উচিত। তৃণমূল শিবিরের প্রশ্ন, বিজেপিও তো উত্তরপ্রদেশ, গোয়ার মতো রাজ্যে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ ও নানা জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার জন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির কোষাগারে কত খানি চাপ পড়বে, তা নিয়ে কেন্দ্রের সচিবরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে মুখ খুলেছেন কি! সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রামগোপাল যাদবের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়ার টাকা নেই। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি জাতীয় স্তরেই হতে পারে। খাদ্য নিগমের ভর্তুকি বাবদ ৪.২৭ লক্ষ কোটি টাকা দু’বছর ধরে বকেয়া পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারেরই দেউলিয়া অবস্থা।’’
পশ্চিমবঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো মানুষের হাতে নগদ অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়ার প্রকল্প তৃণমূলের তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তাতে বাজেটের উপরেও চাপ বেড়েছে। নতুন অর্থ বছর, ২০২২-২৩-এর জন্য রাজ্য যে বাজেট পেশ করেছে, তাতে নতুন সামাজিক প্রকল্প ঘোষণা না হলেও পুরনো প্রকল্পগুলি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্যের বাজেট অনুযায়ী, অর্থ বছরের শেষে রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে। নবান্নের অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য, রাজকোষ ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি লাগামের মধ্যেই রয়েছে। রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা রয়েছে ঠিকই। কেন্দ্রের ঋণের বোঝাও অতিমারি পর্বে বেড়েছে। উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরের শেষে পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে বাঁধা থাকবে। যা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ঊর্ধ্বসীমার মধ্যে। কেন্দ্রীয় সরকারও ৪ শতাংশ ঘাটতি রাখতে সম্মতি দিয়েছে।