দিল্লি ভোটেও ছায়া ফেলছে অনুপ্রবেশ
West Bengal BJP

২০২৬-এ চোখ, মেরুকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অস্ত্র বিজেপির

নচেৎ দলের পক্ষে ক্ষমতায় আসা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। দল মনে করছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের পক্ষে উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের পথে হাঁটতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তাকে মাথায় রেখে বাংলাদেশের চলতি অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে রাজ্যে যথাসম্ভব হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্য নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল মুসলিম সমাজের নিঃশর্ত সমর্থন পেয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে হিন্দু ভোটের সামগ্রিক মেরুকরণ প্রয়োজন। নচেৎ দলের পক্ষে ক্ষমতায় আসা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। দল মনে করছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের পক্ষে উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যেনতেন ভাবে এখন সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে জনবিন্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদেরও বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, এই মর্মে প্রচারের সুর বাঁধতে চাইছে গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। জনবিন্যাসের পরিবর্তন হলে কী হয়, তার আদর্শ উদাহরণ বাংলাদেশ। রাজ্যের হিন্দু সমাজ যত দ্রুত তা বুঝবে, ততই মঙ্গল।’’ বাংলাদেশকে সামনে রেখে বিজেপি যে হিন্দু ভোটকে একজোট করার কৌশল নিয়েছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কারণে দেরিতে হলেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে হওয়া হামলার ঘটনার সমালোচনা করে মুখ খুলেছেন তৃণমূল
শীর্ষ নেতৃত্বও।

মাঝে আর জি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বিজেপি। প্রচারের আলো অনেকটাই শুষে নেয় বামপন্থীরা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অস্থিরতা, ধারাবাহিক ভাবে সে দেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসতে থাকায় চিরপরিচিত সাম্প্রদায়িক অস্ত্রেই মেরুকরণের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারির প্রতিবাদে পথে নেমেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ছাড়াও পথে নেমেছে একাধিক গেরুয়া সংগঠন। আগামী দিনে একাধিক বিক্ষোভ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলনের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে এ নিয়ে ঘরোয়া ভাবে প্রচারের পথে হাঁটছেন গেরুয়া নেতৃত্ব। বৃহত্তর রণকৌশলের অঙ্গ হিসাবে সামাজিক মাধ্যমেও বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হওয়া হামলার ঘটনাগুলি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করার নীতি নেওয়া হয়েছে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হামলার বিষয়টিকে সামনে রেখে আসন্ন দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও প্রচারে নামার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতারা। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য দিল্লি তথা রাজধানী সংলগ্ন এলাকার জনবিন্যাস পাল্টে যাচ্ছে, এমন অভিযোগে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, ভোটব্যাঙ্কের চক্করে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দিল্লিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়ার পাশাপাশি পরিচয়পত্র করিয়ে দিচ্ছে আম আদমি পার্টি। লক্ষ্য অনুপ্রবেশকারীদের ভোট দলের পক্ষে নিশ্চিত করা।

বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে আগামী দিনে সমস্যায় পড়তে চলেছেন রাজধানীর শান্তিপ্রিয় মানুষ। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘শাহিনবাগের মতো মুসলিমবহুল এলাকায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক কারণে এদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে শাসক দল। আগামী দিনে এর ফল ভুগতে হবে দিল্লিবাসীকেই।’’ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি তথা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে কী ধরনের অত্যাচারের মধ্যে
কাটাতে হচ্ছে, তা নিয়ে ভোটমুখী দিল্লিতে জনমত তৈরিতে ইতিমধ্যেই দিল্লির একাধিক মতুয়া সংগঠন পথে নেমেছে। আপ নেতৃত্বের অভিযোগ, ওই মতুয়া সংগঠনগুলির পথে নামার পিছনে বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো দলগুলির প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। যাদের লক্ষ্যই হল বাংলাদেশের ঘটনাকে সামনে রেখে ২০২৫ সালের গোড়ায় হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া তোলা। যদিও মতুয়া সংগঠনগুলির দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু সমাজের হাতে যারা নিপীড়িত হচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই হলেন মতুয়া সমাজের। তাই তাঁদের স্বার্থরক্ষায় পথে নেমেছে মতুয়া সংগঠনগুলি।

আরও পড়ুন
Advertisement