পহেলগাঁও হামলায় পর্যটকদের ত্রাতা দুই বোন মুমতাজ এবং রুবিনা। ছবি: সংগৃহীত।
ওরা জঙ্গিহামলার পরোয়া করেনি। পর্যটকদের কী ভাবে বাঁচানো যায়, কী ভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই ভেবেছিল। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ফলে তাদের দু’জনের জন্যই প্রাণ বাঁচে বেশ কয়েক জন পর্যটকের।
ওরা দুই বোন। কাশ্মীরি-কন্যা। এক জনের নাম রুবিনা। অন্য জন মুমতাজ। বৈসরন উপত্যকার ধারে-কাছেই থাকে ওরা। পর্যটকদের ‘গাইড’ হিসাবে কাজ করে। বৈসরন উপত্যকা হাতের তালুর মতো চেনা দুই বোনের। পর্যটকদের বৈসরনের ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখানোর কাজ করে। রুবিনার সঙ্গে থাকে তার দিদি মুমতাজও।
স্থানীয়দের কাছে রুবিনা ‘কাশ্মীরের খরগোশ কন্যা’ নামে পরিচিত। কারণ, পর্যটকেরা বৈসরনে এলে তাঁদের হাতে নিজের পোষা খরগোশ তুলে দেয় রুবিনা। সামান্য টাকার বিনিময়ে তার পর ওই পোষ্যের সঙ্গে পর্যটকদের ছবি তুলে দেয় সে। বৈসরনে পর্যটকদের সঙ্গেই ওদের দিন কেটে যায়। কিন্তু গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার, দিনটা ছিল অন্য রকম। আর ওই দিনেই দুই বোনকেও দেখা গিয়েছে অন্য আর ভূমিকায়। যা প্রশংসিত হচ্ছে দেশ জুড়ে।
অন্য দিনের মতো ওই দিনও চেন্নাইয়ের বেশ কয়েক জন পর্যটকের ‘গাইড’ হিসাবে গিয়েছিল রুবিনা, মুমতাজ। দুপুরের দিকে যখন জঙ্গিরা হামলা চালায় রুবিনা এবং মুমতাজ নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে তাঁদের সঙ্গে যাওয়া পর্যটক এবং আরও বেশ কিছু পর্যটককে রাস্তা দেখিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। শুধু তা-ই নয়, পর্যটকদের সঙ্গে থাকা শিশুদের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, আগলে নিয়ে যায় দুই বোন। প্রথমে কয়েক জন পর্যটককে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেয়। তার পর আবার আরও এক দলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। এ ভাবে বেশ কয়েক বার ছুটে ছুটে গিয়ে পর্যটকদের ভাগে ভাগে নিয়ে আসে দুই বোন। এমনকি এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে পর্যটকদের সব কিছু বুঝিয়েও দিয়েছিল তারা।
রুবিনা এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ওই সময় আমরা নিজেদের সুরক্ষার কথা না ভেবে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ওরা হাঁটতে পারছিল না। সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছিল। সকলেই শুধু বলছিল, আমাদের বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও।’’ পাহাড়ি রাস্তা, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পর্যটকদের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে রুবিনা এবং মুমতাজ। তার পর তাঁদের সকলকে নিরাপদে হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করে দুই বোন।