(বাঁ দিকে) কাশ্মীরি গাইড নজাকত শাহের সঙ্গে ছত্তীসগঢ়ের অরবিন্দ আগরওয়াল (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
নিজের জীবন বাজি রেখে ছত্তীসগঢ়ের ১১ পর্যটককে জঙ্গি হামলা থেকে বাঁচিয়েছেন কাশ্মীরি যুবক নজাকত শাহ। ঘটনাচক্রে, ওই একই হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর মামাতো ভাই আদিলের। ভাইকে হারিয়ে বিষণ্ণতায় ভেঙে পড়েও নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিলেন নজাকত। ১১ পর্যটককে সুরক্ষিত ভাবে শ্রীনগরে পৌঁছে দিয়ে তবেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
নজাকত পহেলগাঁওয়েরই বাসিন্দা। বৈসরন উপত্যকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁর গ্রাম। শীতের সময় নজাকত সোয়েটার, শাল-সহ নানা রকম গরম পোশাক নিয়ে চলে যান ছত্তীসগঢ়ে। সেখানে চিরমিরি শহরের আশপাশের গ্রামে এই গরম পোশাক বিক্রি করেন। ব্যবসার সূত্রে ওই এলাকাতেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি। কয়েক বছর ধরে এ ভাবে যাতায়াত আর ব্যবসার সুবাদে গ্রামেরই অরবিন্দ আগরওয়াল এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়। আর সেই পরিচয় এবং আলাপ সূত্রে আগরওয়াল পরিবারকে কাশ্মীরে ঘুরতে আসার আহ্বান জানান নজাকত।
নজাকতের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আগরওয়াল পরিবারের ১১ জন সদস্য গত ১৭ এপ্রিল জম্মু পৌঁছোন। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা ঘুরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। শ্রীনগর, গুলমার্গ, সোনমার্গ ঘুরে ভ্রমণের শেষ দিন পহেলগাঁওয়ে তাঁদের নিয়ে যান নজাকত। দুপুর ১২টায় বৈসরন উপত্যকায় পৌঁছোন তাঁরা। পরিবারের সকলে বৈসরনে পৌঁছেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। দুপুর দেড়টা নাগাদ আগরওয়াল পরিবারেরই এক সদস্য কুলদীপ অন্যদের বলেন যে, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, এ বার ফেরা উচিত। নজাকত জানান, ঠিক তখনই গুলির আওয়াজ শোনা যায়। লোকজন এ দিক ও দিক ছুটে পালাতে থাকেন। নজাকত তখন আগরওয়াল পরিবারের তিন শিশুকে নেন এবং বাকিদের বলেন ছুটতে। যদিও হামলাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিলেন আগরওয়াল পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু নজাকত বিপদ বুঝে নিজে আগরওয়াল পরিবারকে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যান। পাহাড়ি রাস্তা ধরে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যান নজাকত। আগরওয়াল পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, নজাকত যেহেতু স্থানীয় যুবক, তাই এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, কোন রাস্তা দিয়ে যাওয়া উচিত, সবই জানেন। ফলে নিজের সুরক্ষার কথা না ভেবে তাঁদের ১১ জনকে সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দিয়ে তবেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন পর্যটক এবং এক জন স্থানীয় যুবক। আর সেই স্থানীয় যুবকের নাম আদিল হুসেন শাহ। পর্যটকদের বাঁচাতে তিনি এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয় জঙ্গিরা। ঘটনাচক্রে, এই আদিলই নজাকতের মামাতো ভাই। এক সংবাদমাধ্যমকে নজাকত বলেন, ‘‘পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়াকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। ওঁদের সুরক্ষা আমার কাছে প্রথম।’’ এর পরই নজাকত জানান, জঙ্গিদের হাতে নিহত ভাই আদিলের শেষকৃত্যেও যেতে পারেননি। কারণ, তাঁর ভরসায় আসা পর্যটকদের নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়াকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।