নিরমার বিজ্ঞাপনে শুভেন্দু অধিকারী! বিআরএসের পোস্টার ঘিরে শোরগোল। ছবি: সংগৃহীত।
এ বার তেলঙ্গানার রাজনীতিতেও ‘প্রাসঙ্গিক’ হয়ে উঠলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী! সে রাজ্যের শাসকদল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-র একটি পোস্টারে বেশ কয়েক জন নেতার সঙ্গে দেখা গেল শুভেন্দুকেও। নিরমা সংস্থার বিখ্যাত বিজ্ঞাপনের আদলে বানানো ওই পোস্টারে দেখা যাচ্ছে নানা সময় দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ৮ জনকে নেতাকে। এই ৮ জনের মধ্যে রয়েছেন শুভেন্দুও। পোস্টারের একদম উপরে লেখা হয়েছে “ওয়াশিং পাউডার নিরমা।” বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত নেতারা বিজেপিতে যোগ দিলেই ‘সাধু’ হয়ে যান, বিরোধীদের এই অভিযোগের প্রতিফলনই এই পোস্টারে দেখা গিয়েছে। স্বভাবতই দক্ষিণের রাজ্যে এই পোস্টার দেখে উল্লসিত বাংলার শাসকদল তৃণমূল। বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে পাল্টা খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের দল ভাঙানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
রবিবারই সিআইএসএফের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হায়দরাবাদে পৌঁছনোর কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। বিআরএস সূত্রে খবর, শাহকে রাজ্যে অভ্যর্থনা জানাতেই ওই পোস্টার লাগানো হয়েছে। ওই পোস্টারে শুভেন্দু ছাড়াও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ছবি রয়েছে। নিরমার বিজ্ঞাপনের বিখ্যাত নিরমা গার্লের আদলে বানানো একটি শিশুর দেহাংশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এই সব নেতার মুখ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। হিমন্ত এবং জ্যোতিরাদিত্যও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
এই পোস্টারের নেপথ্যে রাজনীতির ‘বৃহত্তর অঙ্ক’র কথাও মাথায় রাখছেন কেউ কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী জোট গঠনে বিশেষ সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে বিআরএস প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে, যিনি ‘কেসিআর’ নামেই সমধিক পরিচিত। কিছু দিন আগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে অপব্যবহার করার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন ৯ বিরোধী নেতানেত্রী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেসিআরও। মমতাও বহু বার বিজেপিকে কটাক্ষ করে জানিয়েছেন, বিজেপিতে গেলেই কোনও তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করবে না। তাঁর মুখেও শোনা গিয়েছে ‘নিরমা’ এবং ওয়াশিং পাউডারের প্রসঙ্গ। বিরোধী জোটগঠনের জন্য যখন তৃণমূল এবং বিআরএসের মতো দলগুলি কাছাকাছি আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তখন তৃণমূলের ভাষ্যেই বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে তেলঙ্গানার শাসকদল। এই ঘটনাকে অর্থবহ বলে মনে করছেন অনেকে। তা ছাড়া কেসিআর-কন্যা কবিতাকেও দিল্লির আবগারি দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
কিছু দিন আগেই বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে ইডি। বিজেপিতে গেলে কাউকে তদন্তের সম্মুখীন হতে হয়ও না বলে দাবি করেন তিনি। তেলঙ্গানা নিরমা-পোস্টার ঘিরে বাংলার শাসকদল যখন ‘উজ্জীবিত’, তখন বিজেপির দাবি, সবার আগে তৃণমূলেরই দলবদলু নেতাদের নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত। এই প্রসঙ্গে নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, “অন্য দলে থাকার সময় মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহ, মানস ভুঁইয়া সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই সব মামলা ধামাচাপা পড়ে গেল। তাই তৃণমূলের মুখে এ সব কথা শোভা পায় না।”