ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী হিংসার বিষয়টি নজিরবহীন ভাবে উঠে এল উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায়। আজ ওই রাজ্যের বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের বক্তব্যের উত্তরে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আজ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী হিংসার বিষয়টি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৪২টি আসনের মধ্যে ১৪২টি আসনে হিংসা হয়েছে। সেখানে উত্তরপ্রদেশে কড়া ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করায় কেবল বিধানসভাতেই নয়, পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভাতেও হিংসার একটি ঘটনাও ঘটেনি।
যোগী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিরোধিতা বেশ পুরনো। সদ্য হয়ে যাওয়া উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করে সে রাজ্যের বারাণসীতে প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে যোগীকে ভোগী বলে কটাক্ষ করেন মমতা। সে সময় এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও, আজ এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রসঙ্গ টেনে আনেন যোগী। বিধানসভায় মমতার নাম না করে তিনি বলেন, “এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এক জন দিদি এসেছিলেন। যাঁর নিজের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক হিংসার সাক্ষী থেকেছে।” যোগী দাবি করেন, ওই রাজ্যের ‘২৪২টি আসনের মধ্যে’ (আসলে ২৯৪টি) ১৪২টি আসনে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। হিংসার কারণে প্রভাবিত হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বুথ। রাজনৈতিক হিংসার কারণে বিজেপির প্রায় দশ হাজার কর্মী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। খুন হয়েছেন ৭৫ জন।
এর পরেই উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনে বলেন, “উত্তরপ্রদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা অর্ধেক। রাজ্যের লোকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের আগে ও পরে কোনও হিংসার ঘটেনি। সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলার এই হল উদাহরণ।” যোগীর দাবি, কেবল বিধানসভা নির্বাচনই নয় যোগী শাসনে নগরনিগম, লোকসভা, পঞ্চায়েত ও এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। যোগী দাবি করেন, রাজ্যে বিজেপির সরকার ছিল বলেই কড়া ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সমালোচনার সঙ্গেই আজ উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্য ছেড়ে দেশের উন্নয়ন প্রশ্নে সরব হন যোগী। তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশে যদি বিজেপির সরকার না থাকত তা হলে কোনও ভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হত না। বিজেপি নেতৃত্ব সবর্দাই বলে থাকে, কেবল ক্ষমতা দখলই দলের লক্ষ্য নয়। দলের আসল উদ্দেশ্য দেশহিতে কাজ করা।” বিরোধীরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নিজের বক্তব্যে এ ধরনের কথা এত দিন বলতে শোনা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। আজ কার্যত মোদীর সুরেই দেশহিতে সরব হলেন যোগী। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, যোগী আদিত্যনাথের কথাবার্তা ও শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি আর উত্তরপ্রদেশের গণ্ডিতে আটকে থাকতে চাইছেন না। ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বোঝাতে চাইছেন, কেবল উত্তরপ্রদেশ নন, গোটা দেশের কথা তিনি ভাবছেন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, এ ধরনের কথা বলে আসলে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের কাছে যোগী বার্তা দিতে চাইছেন যে মোদীর পরে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে তিনি প্রস্তুত।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় যোগীর বক্তব্যের জবাবে বলেন, “যে রাজ্যে ভুয়ো এনকাউন্টারে হাজারের বেশি লোক মারা পড়ে, যে রাজ্য গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সর্বকালীন রেকর্ড করেছে, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যত কম বলেন ততই ভাল। কেবল মা ফ্লাইওভারের ছবি চুরি করলেই উন্নয়ন হয় না।”