উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।
স্বীকৃতিবিহীন বেসরকারি মাদ্রাসা নিয়ে সমীক্ষা চালানোর পরে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার এ বার ওয়াকফ সম্পত্তির সমীক্ষা করতে তৈরি হচ্ছে। সরকারের এবং জনগণের যে সব সম্পত্তি বহু বছর ধরে ওয়াকফের হাতে রয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব এর বিরোধিতা করে বলেছেন, যোগী সরকার চায় রাজ্যবাসী হিন্দু-মুসলিম প্রশ্নেই ডুবে থাকুক।
মঙ্গলবার সরকারি সূত্রে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সমীক্ষা চেয়েছেন। যোগী সরকারের উপসচিব শাকিল আহমেদ চিঠি লিখেছেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর, সংখ্যালঘু উন্নয়ন সার্ভে কমিশনার, জেলা স্তরের সংখ্যালঘু উন্নয়ন অফিসার, রাজস্ব অফিসার এবং সুন্নি ও শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সিইও-কে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তরফে আবার উপযুক্ত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক এবং কমিশনারদের কাছে। ওয়াকফ সম্পত্তির এলাকাভিত্তিক তালিকা এক মাসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে তাঁদের।
১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি নির্দেশ জারি করে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে বহু জমি তুলে দিয়েছিল। অনাবাদি, ঊষর, উঁচু জমি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে আসার পথ সুগম হয়েছিল। মসজিদ, ইদগা, কবরস্থানের জমি ওয়াকফ বোর্ডের হাতে এসেছিল। তিরিশ বছর পরে জমির বাজারদর বেড়েছে বিপুল। সরকার এখন জমি ফেরত নিয়ে অন্য কাজে লাগানোর কথা ভাবছে। বলা হয়েছে, যত সম্পত্তি ১৯৮৯-এর অর্ডিনান্সের বলে ওয়াকফের অধীনে এসেছে এবং যে সব সম্পত্তি ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন লঙ্ঘন করে সংগৃহীত হয়েছে, তার তালিকা লাগবে এবং ওই সব জমির বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখতে হবে। কোথায় কোথায় মসজিদ-ইদগা-কবরস্থান রয়েছে তা চিহ্নিত করে, বাকি জমির অবস্থা কী, তা নথিভুক্ত করতে হবে।
রাজ্যে দু’টি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে। একটি শিয়া, একটি সুন্নি। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের হাতে রয়েছে দেড় লক্ষ এবং শিয়া বোর্ডের হাতে ১২ হাজার সম্পত্তি। বিরোধী দলনেতা অখিলেশ সরকারের সমীক্ষার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘‘এটা করা উচিত নয়। যোগী সরকার চায় যোগী সরকার চায় রাজ্যবাসী হিন্দু-মুসলিম প্রশ্ন নিয়েই ডুবে থাকুক।’’ প্রসঙ্গত ওয়াকফ আইন বাতিল করার আর্জি নিয়েই সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপির অশ্বিনী উপাধ্যায়।
উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের যদিও বক্তব্য, ‘‘অখিলেশের মতো তোষণের রাজনীতি করা নেতাদের কথায় কিছু যায় আসে না। ওয়াকফের সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাজে লাগে না, মাফিয়ারাই সে সব ভোগ করে। সরকার বরং ওই সব জমি খালি হলে তা থেকে দরিদ্র মুসলিমদের উপকারের ব্যবস্থা করতে পারে।’’ মৌর্যের আরও দাবি, জমি মাফিয়ারা ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েই সরকার নড়ে বসেছে। এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি অবশ্য মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবে মুসলিমদের নিশানা করার জন্যই এ সব করা হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, হিন্দু মঠ বা ট্রাস্টের জমির সমীক্ষা হচ্ছে না কেন তবে?