Royal Bengal Tiger

Tiger: রয়েল বেঙ্গল রহস্য: অসমের মানসে এক বছরে বাঘের সংখ্যা বাড়ল ১৬টি

অসমের বড়োভূমিতে থাকা মানস ১৯৭২ সালে ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত হয় এই অরণ্য।

Advertisement
সায়ন ত্রিপাঠী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ১৩:১৪
বাঘের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে অসমের মানসে।

বাঘের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে অসমের মানসে। ফাইল চিত্র।

গত বছরের গোড়ায় সেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩০। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬টি। বাঘ সংরক্ষণের ইতিহাসে এমনই নজিরবিহীন কৃতিত্ব দেখাল অসমের মানস জাতীয় উদ্যান। চলতি সপ্তাহে মানস ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা (ফিল্ড ডিরেক্টর) অমলচন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, এ বছর সেখানে অন্তত ৪৬টি বাঘের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘ট্র্যাপ ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে প্রতিটি বাঘকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৯টি পূর্ণবয়স্ক বাঘিনী, ১৬টি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাঘ, ৩টি তরুণ এবং ৭টি শিশু রয়েছে।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি মানস ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে যে ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সংযোজিত হয়েছে, সেখানেও ৪টি বাঘের সন্ধান মিলেছে।

Advertisement

২০১০ সালের সুমারিতে মানসে বাঘের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০। ‘জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ’ (এনটিসি) ২০১৪ সালে মানস জুড়ে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে অন্তত ১৬টি বাঘের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। সংস্থার তরফে ২০১৮ সালের শেষ পর্বে প্রকাশিত ‘টাইগার স্টেটাস রিপোর্ট’ জানায়, বাঘের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে অন্তত ২৮।

অসমের বড়োভূমিতে থাকা মানস ১৯৭২ সালে ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত হয় এই অরণ্য। জাতীয় উদ্যান ছিল কার্যত রক্ষীহীন। জঙ্গলে চোরাশিকারের ফলে গন্ডার, বাঘ, চিতাবাঘ, বুনো মহিষ, জলাভূমির হরিণ (সোয়াম্প ডিয়ার)-সহ নানা বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। মানসের ‘ঐতিহ্যক্ষেত্র’ তকমাও নব্বইয়ের দশকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করে দিয়েছিল ইউনেস্কো।

২০০৩ সালে বড়ো শান্তিচুক্তির পর ‘বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল কাউন্সিল’ গঠনের পর স্থিতাবস্থা ফেরে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়। যদিও চোরাশিকারের সমস্যা পুরোপুরি কমেনি। এর পর সমাজের মূল স্রোতে ফেরা বড়ো জঙ্গিদের সাহায্যে ‘বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল কাউন্সিল’ কর্তৃপক্ষ বন্যপ্রাণ রক্ষার কাজ শুরু করে। সাহায্য নেওয়া হয় ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ), ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউটিআই)-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থার বিশেষজ্ঞদের আর তাতে ফল মেলে হাতেনাতে। বাঘ এবং গন্ডারের পাশাপাশি অতি বিপন্ন হিসপিড হেয়ার, পিগমি হগ এমনকি, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান পাখির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এক সময় উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের তৃণভূমিতে এই পাখির অস্তিত্ব মিললেও এখন সেখানে তাদের দেখা মেলে না।

মানসে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজে যুক্ত ডব্লিউটিআই-এর গবেষক সনাতন ডেকা শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘শুধু বাঘ নয়, অন্যান্য বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও মানস দেশের মধ্যে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ২০০৫ সালে মানস গন্ডার-শূন্য হয়ে গিয়েছিল। অসমের কাজিরাঙা এবং পবিতোরা থেকে কয়েকটি গন্ডার এনে শুরু হয় পুনর্বাসনের কাজ। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন ৫০ ছুঁতে চলছে। এক বছরে অনেক বেড়েছে জলাভূমির হরিণের সংখ্যাও।’’ অমলচন্দ্র জানিয়েছেন, ২০১৯-২০-র সুমারিতে মানসে ৭টি ব্ল্যাক প্যান্থার-সহ মোট ২৭টি চিতাবাঘের সন্ধান মিলেছিল। তা আরও বেড়েছে বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে অনুমান করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement