Central Government Projects

রাজ্যে কি কেন্দ্রীয় অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলির চরিত্র বদল? যাচাই করবে অর্থ মন্ত্রকের

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েন অব্যাহত। দেখা নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দেরও।

Advertisement
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০০

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রীয় অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলির চরিত্র বদল হচ্ছে কি না, প্রকল্প ধরে ধরে সেই খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দিল অর্থ মন্ত্রক। প্রকল্পের প্রকৃত নাম বজায় রাখা থেকে শুরু করে কার্যকর করার পদ্ধতি—যাচাই করতে বলা হয়েছে সবটাই। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) পশ্চিমবঙ্গকে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান লিখিত ভাবে জানিয়েছে কেন্দ্র। তার পরে আবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি মন্ত্রককে পৃথক ভাবে প্রকল্পগুলি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে মন্ত্রক-ভিত্তিক খোঁজখবর এ ভাবে হয়েছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আধিকারিকদের অনেকেই।

Advertisement

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েন অব্যাহত। দেখা নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দেরও। এই পরিস্থিতিতে খোঁজখবর নেওয়ার এমন পদ্ধতি তাৎপর্যপূর্ণ। কয়েক জন প্রবীণ আধিকারিকের মতে, এমন পদক্ষেপের অর্থ, আগের থেকে আরও বেশি কেন্দ্রীয় নজর থাকবে প্রকল্পগুলির উপর। সংশ্লিষ্টদের অনুমান, প্রকল্পগুলির রাজ্যভিত্তিক পরিচালনা মন্ত্রকগুলির কাছে সন্তোষজনক হলে হয়তো তবেই মিলবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ।

এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলছে রাজ্যও। অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইচ্ছাকৃত এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নামে কী আসে যায়! কাজ হচ্ছে কি না, সেটাই আসল। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যও তো বরাদ্দ দেয়। রাজনৈতিক স্বার্থে অর্থনৈতিক অবরোধকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। প্রাপ্য টাকা না দেওয়ার সমীক্ষা করুক কেন্দ্র।” তাঁর সংযোজন, “গত প্রায় এক দেড় বছর ধরে আবাস এবং একশো দিনের কাজে রাজ্যে ঘুরে গিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কেন্দ্রীয় দল। ত্রুটি সংশোধন করে তার প্রমাণও দেওয়া হয়েছে। তার পরেও তো বরাদ্দ ছাড়েনি কেন্দ্র! ”

মূলধনী বিনিয়োগ (ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট) বা স্থায়ী সম্পদ তৈরির সঙ্গে সম্পর্ক-যুক্ত প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রের বরাদ্দ থাকে উল্লেখযোগ্য হারে। চলতি বছরে সেই সব প্রকল্পগুলিকে কী ভাবে পরিচালনা করতে হবে, তার সবিস্তার করণীয় লিখিত ভাবে রাজ্যগুলিকে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে অন্যতম, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির সরকারি নাম বদল করা যাবে না। তবে রাজ্যভিত্তিক ভাবে স্থানীয় ভাষায় সেই নামের নিখুঁত অনুবাদ গ্রাহ্য করা হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নে মেনে চলতে হবে কেন্দ্রীয় নীতি এবং নির্দেশ। অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, এর ভিত্তিতে প্রতিটি মন্ত্রক রাজ্যে রাজ্যে প্রকল্পগুলির সামগ্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখবে। প্রকল্পের সর্বভারতীয় চরিত্র বদল হচ্ছে কি না, যাচাইয়ের আওতায় থাকবে তা-ও। এ নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে হবে অর্থ মন্ত্রকে।

প্রবীণ আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আবাস প্রকল্পে অন্যতম বড় অভিযোগ ছিল নাম বদলের। তা সংশোধিত হলেও রাজ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এখনও পায়নি। জলজীবন মিশনের ক্ষেত্রে একই অভিযোগের পর তা সংশোধিত হয়েছে। কিছু দিন কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ থাকলেও, তা এখন চলছে মসৃণ ভাবেই। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় আয়ুষ্মান ভারত - 'হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার' চালু হলেও এ রাজ্যের ক্ষেত্রে তা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণের পরিদর্শন-রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অব্যাহত। তবে এমন যাচাইয়ের পরে কেন্দ্রের অবস্থান আরও কতটা কড়া হবে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে প্রশাসনিক মহলে।

আরও পড়ুন
Advertisement