আশঙ্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ফাইল চিত্র।
ফতোয়া এর আগে অনেক পেয়েছেন। তাঁর মাথার দামও ধার্য হযেছে। কিন্তু এত আশঙ্কিত এর আগে কখনও হননি লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
‘‘তোমরা মানুষ খুন করো?’’ স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় তসলিমার এই টুইটের পরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সঙ্গে তিনি জুড়ে দিয়েছেন জনৈক জেন শেখ-এর টুইট। যেখানে তিনটি ছুরির ছবি দিয়ে তসলিমাকে ট্যাগ করে বলা হয়েছে ‘‘পরের নিশানা তুমি।’’ সাহিত্যিক সলমন রুশদি ছুরিকাহত হওয়ার পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তসলিমা। গোটা বিশ্বে যাঁরা কট্টর মৌলবাদের সমালোচনা করে, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, বিশ্বের সেরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে রুশদির উপরে সফল হামলা করার পরে মৌলবাদীরা উল্লসিত হয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপাবে। কিন্তু এত দ্রুত যে টুইটারে তাঁর প্রাণনাশের হুমকির বন্যা বইবে, তা বোধহয় তসলিমা নিজেও ভাবেননি।
তসলিমার কথায়, “পাকিস্তানের জঙ্গিমনস্ক কট্টরপন্থী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাবাইক-এর প্রধান খাদিম হুসেন রিজ়ভির একটি ভিডিয়ো ক্লিপ করে আমাকে পাঠানো হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি বিরাট জনসমাবেশের সামনে দাঁড়িয়ে রিজ়ভি আমার এবং সলমন রুশদির কার্যত মুণ্ডপাত করছে। বলছে, আমাদের বই ওর কাছে আছে, পয়গম্বরকে আমরা অসম্মান করেছি। বদলা হিসাবে আমাদের কোতল করা হবে। এর পর ঝাঁকে ঝাঁকে টুইট করে প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকে। আমি ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি রিজ়ভি দু’বছর আগেই মারা গিয়েছে। অর্থাৎ পরিকল্পনা করে রিজ়ভির পুরনো ভিডিয়ো ফিরিয়ে এনে কট্টরপন্থীদের উত্তেজিত করা হচ্ছে এখন। রুশদির উপরে হামলার পর, নিশানা করা হচ্ছে আমাকে।” এর আগেও বার বার ফতোয়া পেয়েছেন লেখিকা। “কিন্তু এ বারে যেটা তফাত, সেটা হল এই তেহরিক-ই-লাবাইক শুধুমাত্র একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী নয়, এরা সরাসরি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত। আইএস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে এরা,” বলেন তসলিমা। বিষয়টি আপাতত নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। মাথা কাজ করছে না। শুধু মৌলবাদীদের হুমকিতে ততটা ভয় নেই। কিন্তু আইএস-এর মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠী যে-কোনও নিরাপত্তা ভেদ করতে পারে।” গতকাল স্বাধীনতা দিবসে বাড়ির ছাদে ভারতের জাতীয় পতাকা লাগিয়েছিলেন তসলিমা। তার ছবি পোস্ট করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। লিখেছিলেন, ‘‘হোম সুইট হোম!’’ আজ বলেন, “এই হুমকি আসার পর ছবি ডিলিট করলাম। ওই ছবি দেখে আমার বাড়ি চিনে নেওয়া সম্ভব।”