ম্যানহোলে নেমে সাফাইয়ের কাজ করছেন এক কর্মী। — ফাইল চিত্র।
দেশের ছ’টি বড় শহরে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল নর্দমায় নেমে সাফাইয়ের কাজ। এখন থেকে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদে ম্যানহোল কিংবা নর্দমায় মানুষ নামিয়ে সাফাই বা ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’-এর উপর জারি হল কড়া নিষেধাজ্ঞা। বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয় শহরের প্রধান নির্বাহী কর্তাদের এ সংক্রান্ত হলফনামা জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। রিপোর্টে বিশদ জানাতে হবে, কী ভাবে এবং কখন ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ বন্ধ করা হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার এক সপ্তাহ আগেই বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টে।
অতীতে বহু বার ম্যানহোলে সাফাইয়ের কাজ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসের কবলে একাধিক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৩ সালে দেশে আইন তৈরি হয়েছিল এই ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই আইন বলছে, ম্যানহোল সাফাই, মলমূত্র সাফাই কিংবা বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ কোনও মানুষকে দিয়ে করানো যাবে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে কাউকে ম্যানহোলে নামানো হলেও সংশ্লিষ্ট সাফাইকর্মীর জীবন এবং স্বাস্থ্যের সব রকমের নিরাপত্তা দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এই ধরনের বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির জন্যও সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। অথচ আইনের ফাঁক গলে এখনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কোনও সুরক্ষা ছাড়াই ম্যানহোলে মানুষ নামানোর মতো ব্যবস্থা চালু রয়ে গিয়েছে। শেষমেশ ২০২৩ সালে কেন্দ্রকে রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলে এ সংক্রান্ত খতিয়ান তৈরির নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এ নিয়ে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, দেশের ৭৭৫টি জেলার মধ্যে ৪৫৬টিতে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গিয়েছে ম্যানহোল কিংবা নর্দমায় নেমে সাফাইয়ের কাজ। যদিও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানিয়েছেন, ওই হলফনামায় বেশ কিছু অসম্পূর্ণতা রয়ে গিয়েছে। দেশের বড় শহরগুলিতে এখনও এই নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে সাফাইয়ের কাজ চলে কি না, তা হলফনামায় স্পষ্ট উল্লেখ করা নেই। এর পরেই নতুন করে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে হায়দরাবাদের কাছে ম্যানহোলে সাফাইয়ের কাজ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে মৃত্যু হয় তিন সাফাইকর্মীর। ২০২১ সালে খাস কলকাতায় ম্যানহোলে নেমে জলের তোড়ে ভেসে যান সাত শ্রমিক। মৃত্যু হয় চার জনের।