সুপ্রিম কোর্টে ধমক খেল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং প্রশাসন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
উত্তরপ্রদেশে এক ব্যক্তির থেকে অন্য এক জন ২৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়েও ফেরত দেননি। সেই ঘটনায় দেওয়ানির বদলে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই নিয়ে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ এবং প্রশাসনকে সোমবার ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জানালেন, সে রাজ্যে আইনের শাসন ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। এর আগে বুলডোজ়ার-কাণ্ডেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে ধমক দিয়েছিল হাই কোর্ট।
উত্তরপ্রদেশে দীপক বহেল নামে এক ব্যক্তির থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন আবেদনকারী দেবু সিংহ এবং দীপক সিংহের বাবা বলজিৎ সিংহ। যদিও বলজিৎ সময়ে সেই টাকা ফেরত দেননি বলে অভিযোগ। এর পরে দীপক সেই টাকা চাইলে ছেলেদের সঙ্গে মিলে পাল্টা তাঁকে পুড়িয়ে খুন করার হুমকি দেন বলজিৎ। দেবু এবং দীপকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন দীপক। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারির মামলা রুজু করে। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হুমকি দেওয়ার ধারায় মামলা দায়ের হয়। সেই এফআইআর খারিজের আবেদন জানিয়ে দেবুরা ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। হাই কোর্ট মামলাটি খারিজ করে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন দেবু।
মুখ্য বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘উত্তরপ্রদেশে যা হচ্ছে, তা ভুল। রোজ রোজ দেওয়ানি মামলাগুলিকে ফৌজদারি মামলায় পরিণত করা হচ্ছে। আইনের শাসন ভেঙে পড়ছে।’’ বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, এর আগে উত্তরপ্রদেশ বনাম শরিফ আহমেদের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, এ বার তার উল্টো কথাই বলছে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, তা স্পষ্ট ভাবে তদন্তকারী অফিসারদের চার্জশিটে জানাতে বলেছিল আদালত। যাতে শীর্ষ আদালত বুঝতে পারে, কোন অভিযুক্ত কোন অপরাধ করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কী প্রমাণ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘নির্দেশ মেনে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) এবং স্টেশন হাউস অফিসার বা তদন্তকারী অফিসারকে হলফনামা দিতে হবে।’’ দু’সপ্তাহের মধ্যে ডিজিকে সেই হলফনামা জমা করতে বলেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে এই মামলার যে শুনানি চলছে, তাতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এর আগে প্রয়াগরাজে বুলডোজ়ার দিয়ে বাড়ি ভাঙার ঘটনায় উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনকে ধমক দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বাড়ি ভাঙার অভিযানকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘অমানবিক’ বলেও জানায় শীর্ষ আদালত। বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা হলে, তা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। বাসস্থানের অধিকার বিষয়ে আইনে যা বলা হয়েছে, সব সময় তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব কিছুই মানা হয়নি। এতে সংবেদনশীলতার অভাবই স্পষ্ট হয়।’’