গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল, এ বার নির্দেশেও সেই বার্তা স্পষ্ট করল সুপ্রিম কোর্ট। প্রয়াগরাজে বাড়ি ভাঙার মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়ল উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রয়াগরাজ প্রশাসন এবং যোগী আদিত্যনাথ সরকারের সমালোচনা করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে। বাড়ি ভাঙার অভিযানকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘অমানবিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা হলে, তা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। বাসস্থানের অধিকার বিষয়ে আইনে যা বলা হয়েছে, সব সময় তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব কিছুই মানা হয়নি। এতে সংবেদনশীলতার অভাবই স্পষ্ট হয়।’’
বিতর্কের সূত্রপাত প্রয়াগরাজ প্রশাসনের একটি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে। সেখানকার একটি জমিতে চার-পাঁচ জনের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন এক জন আইনজীবী এবং অধ্যাপকও। অভিযোগ, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই তাঁদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। কেন তাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছিল? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলদের বাড়ি যে জমিতে ছিল, প্রশাসন তা ভুল করে নিহত গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের বলে চিহ্নিত করেছিল। তার পরই ওই বাড়িগুলি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, বাড়ি ভাঙার কথা তাঁর মক্কেলদের জানানো হয় মাত্র এক দিন আগে।
বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ভুক্তভোগীরা প্রথমে ইলাহাবাদ হাই কোর্চের দ্বারস্থ হন। যদিও সেখানে তাঁদের আবেদন খারিজ হয়। তার পরই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি ভূঞার বেঞ্চ সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে। প্রশ্ন তোলে, প্রশাসনের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়েও। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘‘বাড়ি ভাঙার ফলে মামলাকারীরা তাঁদের মাথার উপর ছাদ হারিয়েছেন। তাঁদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, কর্তৃপক্ষের উচিত সর্বদা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।’’
আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যাঁদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাঁদের নোটিসের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’’ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোনও বাড়ি ভেঙে ফেলার আগে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সকল নাগরিকের বাসস্থানের অধিকারের কথা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে।