আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মা তাঁর ছেলের সঙ্গে প্রেমিকার বিয়ে দিতে রাজি না-ই হতে পারেন। এর জন্য বলে দেওয়া যায় না যে তিনি ছেলের প্রেমিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার এক মামলা খারিজ করে এ কথা জানাল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি মহিলা যদি ছেলের প্রেমিকাকে বলেও থাকেন, “ছেলেকে ছাড়া থাকতে না পারলে মরে যাও”, তা-ও সেটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা বলে গ্রাহ্য হতে পারে না বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৮ সালে। নরেন্দ্রপুর এবং গড়িয়া স্টেশনের মাঝে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন সৌম্যা পাল নামে এক তরুণী। বাবু দাস নামে এক তরুণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, প্রায় তিন-চার বছর ধরে ওই যুগল প্রণয়ের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তরুণীর দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ। পরে মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বাবুর বাবা-মা এবং অন্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। মৃতের পরিবারের দাবি, তারা বার বার সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বলতেন সৌম্যাকে। পড়াশোনায় মন দিতে বলতেন। কিন্তু বাবুর পরিবারের লোকেরা উল্টে এ সবে প্রশ্রয় দিতেন বলে অভিযোগ তাঁদের।
পরে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, ঘটনার কয়েক দিন আগে বাবুর সঙ্গে তাঁর প্রেমিকার তর্কাতর্কি হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, দু’জনের বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন বাবুর মা। এই নিয়ে তিনি সৌম্যাকে অপমানও করেছিলেন বলে অভিযোগ প্রেমিকার পরিবারের। মামলাটি প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন ছিল। সেখানে বাবুর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেয় আদালত। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সম্প্রতি মামলাটি ওঠে বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চে।
শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বাবুর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা খারিজ করে দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, যদি মহিলা সন্তানের সঙ্গে তাঁর প্রেমিকার বিয়ে দিতে রাজি না-ও হন, তবেও এটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ— কোনও ভাবেই আত্মহত্যায় প্ররোচনা বলা যায় না। আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারা যুক্ত করতে হলে এমন কোনও কাজের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ লাগবে, যা মৃতকে ওই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
গত বছরে বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অতুল সুভাষের মৃত্যুর ঘটনার পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠে আসে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। অতুলকাণ্ডের পর থেকে সম্প্রতি আরও বেশ কয়েকটি ঘটনাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট অতীতেও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে কোন ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কোন ক্ষেত্রে তা হতে পারে না।