গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য আর সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে না। সোমবার এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যুগ্ম সচিব বা তার উপরের স্তরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি তদন্ত করতে পারবে। বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধান বেঞ্চ জানিয়েছে, ২০০৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের পরে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত সব অভিযোগের ক্ষেত্রেই এই রায় কার্যকর হবে।
২০১৪ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়াই উচ্চপদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। এই উদ্দেশ্যে দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট (ডিএসপিই) আইনের ৬(এ) ধারা এবং ১৯৪৬ সালের সরকারি বিধি বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু শীর্ষ আদালতের এই রায় সংবিধানের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও সোমবার সাংবিধানিক বেঞ্চ কার্যত সেই রায় বহাল রাখার পাশাপাশি বিনা অনুমতিতে তদন্তের সীমা ২০০৩ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রায় এক দশক আগে রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, বড় মাপের আর্থিক দুর্নীতি সচরাচর উচ্চপদস্থ আমলাদের যোগসাজশেই ঘটে। কারণ তাঁরাই নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে অসাধু ব্যবসায়ী-ঠিকাদার-শিল্পপতিদের সরকারি সম্পদ লুণ্ঠনের ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকারী। নিচুতলার সরকারি আধিকারিকদের সে ক্ষমতা নেই। তাই উচ্চপদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সরকারের অনুমতিসাপেক্ষ হলে দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও গভীরতা উদ্ঘাটন করা কঠিন হয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে। শীর্ষ আদালতে মত ছিল, তদন্তের জন্য আগাম অনুমতি নিতে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা সতর্ক হওয়ার এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপ করার সময় ও সুযোগ পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বও তদন্তপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সুযোগ পাবেন। যদি মন্ত্রী কিংবা শাসক দলের প্রভাবশালী রাজনীতিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে তদন্তের অনুমতি পাওয়া কঠিন হবে এমনকি, অনুমতি মিললেও পদে পদে বাধা পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।