Kolkata Doctor Rape and Murder

‘পুরুষতন্ত্রই দায়ী’, আরজি কর-কাণ্ডের শুনানিতে অরুণা শানবাগের প্রসঙ্গ টেনে বলল সুপ্রিম কোর্ট

গলায় কুকুর বাঁধার চেন জড়িয়ে ধর্ষণ করা হয়। সাময়িক ভাবে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছয়নি তাঁর। এর পরেই অরুণা চলে যান কোমায়। সে ভাবেই জীবনের বাকি ৪২টি বছর কেটেছিল তাঁর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ১৮:১১

— ফাইল চিত্র।

আরজি কর প্রসঙ্গে অরুণা শানবাগের ঘটনার প্রসঙ্গ টানল শীর্ষ আদালত। ৫১ বছর আগে আর এক স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘মহিলা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার জন্য দায়ী পুরুষতন্ত্রই।’’

Advertisement

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডের স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। নির্দেশ, দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী শুক্রবার।

শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বার বার মহিলা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার জন্য পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবই দায়ী। যে কারণে সামান্য ভুলচুক হলেই রোগীর স্বজনেরা প্রথমে মহিলা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চড়াও হন। এ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁদের— কখনও সহকর্মীদের হাতে, কখনও ঊর্ধ্বতন আধিকারিক কিংবা কর্তৃপক্ষের হাতে, কখনও আবার বাইরের লোকের হাতেও।’’ এর পরেই অরুণা শানবাগের প্রসঙ্গ টানেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। মনে করিয়ে দেন, ৫১ বছর আগেও একই নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল একটি ঘটনা। প্রধান বিচারপতির মতে, এখন মহিলারা আরও বেশি সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন। পা রাখছেন প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানচর্চার দুনিয়ায়। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।

কে এই অরুণা শানবাগ?

১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাস। ডিউটি শেষে পোশাক বদলাতে মুম্বইয়ের কেইএম হাসপাতালের বেসমেন্টে গিয়েছিলেন পেশায় নার্স অরুণা। তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়। গলায় কুকুরের চেন জড়িয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। সাময়িক ভাবে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছয়নি অরুণার। কোমায় চলে যান তিনি। হারান দৃষ্টিশক্তিও। জীবনের বাকি ৪২টি বছর তাঁর কাটে ওই হাসপাতালেরই চার নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায়। অন্য দিকে, অভিযুক্ত শোভনলাল বাল্মীকিকে মাত্র সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয় আদালত! ধর্ষণ, অস্বাভাবিক যৌন নির্যাতনের মতো গর্হিত অপরাধের ধারা থেকে রেহাই পায় সে। ২০১৫ সালের মে মাসে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অরুণার।

মঙ্গলবার সেই অরুণা শানবাগ মামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েই শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মূলগত পরিবর্তন দরকার। প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা। যাঁরা বাকিদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকেন তাঁদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাও রাষ্ট্রেরই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই দায়িত্ব অনুযায়ী পদক্ষেপের জন্য দেশ নিশ্চয়ই আরও একটি ধর্ষণ বা খুন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না।

আরও পড়ুন
Advertisement