ইউনিয়ন কার্বাইডের সেই কারখানা। — ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি ভোপালের পরিত্যক্ত ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে প্রায় ৩৭৭ মেট্রিক টন ‘বিপজ্জনক’ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের পিথমপুরে। তা নিয়ে চলছে বিতর্কও। যদিও রাজ্যের আশ্বাস, যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করেই বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। সেই আবহে এ বার রাজ্যকে কড়া নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানাল, ওই বর্জ্য যে আদৌ বিপজ্জনক নয়, তা প্রমাণ করতে হবে রাজ্যকেই।
একাধিক বার ভোপালের ওই কারখানা চত্বর থেকে বর্জ্য সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। শেষমেশ জানুয়ারি মাসে, গ্যাস দুর্ঘটনার ৪০ বছর পর কারখানা চত্বর সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়। সেই থেকে বিতর্কের শুরু। হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে দায়ের করা হয় জনস্বার্থ মামলা। ওই মামলাতেই মঙ্গলবার বিচারপতি বিআর গবইয়ের নির্দেশ, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ‘বিষাক্ত’ বর্জ্য নিয়ে যা যা প্রশ্ন উঠছে, সেগুলি ভিত্তিহীন কি না, তা প্রমাণ করতে হবে রাজ্যকেই। যদি মামলাকারীদের দাবি যুক্তিসঙ্গত হয়, সে ক্ষেত্রে রাজ্যকে এ-ও দেখাতে হবে যে, ওই বর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। যদি সত্যিই প্রমাণিত হয় ওই বর্জ্য ‘বিপজ্জনক’ নয়, তা হলে বর্জ্য নিষ্কাশনে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না সুপ্রিম কোর্ট।
১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লিক করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় অনেকের। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৭৮৭। কিন্তু বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এর প্রভাবে নানা শারীরিক ক্ষতি হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের। তার পর থেকে বন্ধই পড়ে আছে কারখানাটি। আর ৪০ বছর আগের সেই গ্যাস দুর্ঘটনার ফল এখনও ভুগছে ভোপাল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব রয়ে গিয়েছে। ফলে ওই বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়েও চলছে চাপানউতর। যদিও রাজ্যের তরফে বার বারই জানানো হয়েছে, ওই বর্জ্য পিথমপুরে পরিবেশ দূষণ ঘটাবে, এমন দুশ্চিন্তা অমূলক। ওই বর্জ্য যাতে যথাসম্ভব নিরাপদে নিষ্কাশন করা হয়, তা-ও নিশ্চিত করা হবে।