অশান্তি মণিপুরে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মণিপুরের জিরিবামের ত্রাণ শিবির থেকে অপহৃত তিন শিশু ও তিন মেইতেই মহিলা আদৌ বেঁচে আছেন কি না, আজ রাতে সেই প্রশ্ন উঠে গেল। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় অসম-মণিপুর সীমানার জিরি নদীতে এক মহিলা ও দুই শিশুর দেহ ভাসতে দেখা যায়। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। জিরিঘাট এলাকায় জিরি ও বরাক নদীর সংযোগস্থল থেকে দেহগুলি উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। রাতে দেহ পাঠানো হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনটি দেহ শিলচর মেডিক্যাল কলেজে আসার কথা অসম পুলিশ রাতে মেনেও নিয়েছে। তবে সেখানে কর্তব্যরত কিছু পুলিশকর্মী দাবি করেন, ওই তিনটি দেহই প্রাপ্তবয়স্কদের।
মেইতেইদের দাবি, মার জনজাতিরা এই মহিলা ও শিশুদের অপহরণ করেছিল। তাঁদের উদ্ধারের জন্য রাজ্যের তাবড় পুলিশকর্তারা জিরিবামে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে দেহ উদ্ধারের খবর প্রসঙ্গে পুলিশকর্তারা স্পষ্ট কিছু বলছেন না। আবার একে গুজব বলে পুরোপুরি উড়িয়েও দিচ্ছেন না। কাছাড়ের এসপি নোমল মাহাত্তা বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি। তবে কাছাড়ে কোনও মৃতদেহ উদ্ধারের খবর নেই। তা মণিপুরেই হতে পারে।’’
অসমের ডিজিপি জি পি সিংহ বলেন, অসমে কারও দেহ উদ্ধারের খবর নেই। মেইতেইদের যৌথ মঞ্চ কোকোমি জানায়, তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনও নিশ্চিত খবর আসেনি। কুকি যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, তারাও বিষয়টি শুনেছে। কিন্তু কিছু জানে না। এ দিন অপহৃতদের পরিবার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে দেখা করলে তিনি সকলকে জীবিত উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে কেন্দ্রকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকপত্র পাঠিয়ে দাবি করেছিল কোকোমি।
জিরিবামে মার জনজাতির ১০ জনের নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মণিপুরের মোরে, কাংপোকপি ও দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে আজ। এর পরে কুকি-জ়ো-মার যৌথ মঞ্চের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্মারকপত্র পাঠানো হয়। কুকিরা মেইতেই আক্রমণকারীদের হাতে নিহত মার যুবতী জোসাংকিম ও মার গ্রামরক্ষীদের ময়না তদন্তের রিপোর্ট তুলে ধরে অভিযোগ করেছে, তিন সন্তানের মা ওই যুবতীকে গুলিতে জখম করার পরে তাঁর পায়ে পেরেক ঠোকা, খুলি ফাটানো ও হাত-পা ছিন্ন করা হয়েছিল। তার পরে নিজের বাড়ি-সমেত পোড়ানো হয়েছিল তাঁকে। দেহটি একেবারে পুড়ে যাওয়ায় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা ময়না তদন্তে নিশ্চিত জানা যায়নি।
কুকিদের দাবি, এমন নৃশংস ঘটনার রোষেই মার জনজাতিরা গত সোমবার জাকুরাধর ও বরবেকরা এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগায়। সিআরপি বুলেটপ্রুফ গাড়ি থেকে তাদের গুলি করতে থাকে। এক গ্রামরক্ষী ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকিদের নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়ে মারা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
শাহ ও কমিশনকে দেওয়া স্মারকপত্রে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ আসাম রাইফেলসকে সরিয়ে সিআরপি নিয়োগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। মানুষ সিআরপিকে বয়কট করেছে। তাই আসাম রাইফেলসকেই ফেরানো হোক। আবার মেইতেই মহিলারা ইম্ফলে মিছিল করে দাবি তুলেছেন, পাঁচ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মণিপুর ছাড়তে হবে। সেনার উদ্ধার করা অস্ত্র আরাম্বাই ও মেইতেই বাহিনীকে ফেরত দিতে হবে। সংঘর্ষ চলাকালীন মেইতেই যুবকদের গ্রেফতারও করা যাবে না।
কামজং-মায়ানমার সীমান্তে গুলির লড়াইয়ে আসাম রাইফেলসের এক জওয়ানের মৃত্যুর খবর এলেও আসাম রাইফেলস তা স্বীকার করেনি। সংঘর্ষের জেরে মণিপুরের আরও ৬টি এলাকা আফস্পার আওতায় এনেছে কেন্দ্র। আফস্পা চাপানো, মায়ানমার সীমান্তে বেড়া বসানো ও অবাধ যাতায়াতের নিয়ম বা এফএমআর বন্ধ করে দুই পারের নাগাদের ‘বিচ্ছিন্ন’ করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মণিপুরের নাগা এলাকা উখরুলে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।