কংগ্রেস সংসদীয় নেত্রী সনিয়া গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
সাংসদদের মধ্যে সম্পর্কের গভীর বন্ধন নিয়ে আজ লোকসভায় দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বসার পরেই পরবর্তী বক্তা হিসাবে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর নাম ঘোষণা হল। অধীর চৌধুরী, আগের অধিবেশনে কংগ্রেস কেন তাঁকে বলতে দেয়নি বলে বহুল কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। আজ কিন্তু সেই অধীরের বক্তৃতা শোনার অপেক্ষা করলেন না তিনি। বিরোধী বেঞ্চের তরফে বক্তৃতা শোনার জন্য উচ্চকণ্ঠের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেই চলে গেলেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও কংগ্রেস সংসদীয় নেত্রী সনিয়া গান্ধী নিজে পাশে বসে অধীরকে দিয়ে আক্রমণ শানালেন মোদী সরকারকে। অধীর বলতে শুরু করার পর প্রথমে দেখা যায় সনিয়াও উঠে যাচ্ছেন। বিরোধীরা পাল্টা চিৎকার জুড়লে সনিয়া হেসে বলেন, “আমি যাচ্ছি না, এখনই আসছি।” তাঁর ছেড়ে যাওয়া ব্যাগটি হাতে তুলে অধীরকেও বলতে শোনা যায়, “চিন্তা নেই, উনি আসছেন।” একটু পরেই ফিরে এসে আসনে বসেন সনিয়া। গোটা সময় ধরে অধীরকে উৎসাহ এবং নির্দেশ দিয়ে যান।
সংসদীয় মর্যাদা থেকে শুরু করে ‘ইন্ডিয়া’ বনাম ‘ভারত’ বিতর্ক নিয়ে সরকারকে আজ খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেসের এই সাংসদ। অধীর বলেন, “আজকের এই পুরনো সংসদ ভবন থেকে সরে যেতে হবে আমাদের। এটা সবার জন্য সত্যিই একটি আবেগঘন মুহূর্ত। পণ্ডিত নেহরু বলেছিলেন যে সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশ নিতে হলে অনেক গুণের প্রয়োজন। যোগ্যতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলা প্রয়োজন। পণ্ডিত নেহরু বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় কখনও ঠাট্টা করেননি বা বিভ্রান্ত করেননি। সংসদে বক্তৃতা করার সময়সীমা মানতেন তিনি। সংসদের অবমাননা করেননি কখনও। এটাই ছিল ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রে নেহরুর ভূমিকা।”
তার পরে অধীর যোগ করেন, “১৯৪৬ সালে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে পরমাণু গবেষণা কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেখান থেকে আমরা এগিয়ে গিয়ে ১৯৬৪ সালে ইসরো গড়ে তুলি। কিন্তু আজকে আমরা ইসরোকে কী বলে ডাকব? এই ভারত, ইন্ডিয়া বিভাজন কোথা থেকে উঠে এল?”
ট্রেজ়ারি বেঞ্চ যত বার আজ চিৎকার করে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে অধীরকে, পাশ থেকে চেঁচিয়ে সনিয়া বলে গিয়েছেন, “তুমি বলে যাও! একদম থেমো না। আপনারা চুপ করুন! ওঁকে বলতে দিন।” অধীর যখন সিবিআই ইডি-কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন, তখন সরকার পক্ষ চেঁচিয়ে ওঠে। সনিয়াকে ফের বলতে শোনা যায়, “ও যা বলছে একদমই ঠিক। এটা সত্যি।”
অধীর বলে চলেন, “আমরা হয়তো আগামী দিনে থাকব না। এই সংসদ ভবনও থাকবে না। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থেকে যাবে এই স্মৃতিগুলো। আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে যা বলে যাচ্ছি, সেগুলোই চিরকালের জন্য রয়ে যাবে। ঠিক যেমন ভাবে রাজেশ খান্না বাবুমশাইকে বলে গিয়েছিলেন, ‘জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নহি।' আমাদেরও এই লাইনগুলি মনে রাখতে হবে।” বক্তৃতার পর সনিয়া অধীরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “খুব ভাল বলেছ।” পিছনে বসা রাহুল গান্ধীও করমর্দন করেন তাঁর সঙ্গে।
অন্য দিকে রাজ্যসভায় কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেও তাঁর বক্তৃতায় প্রথমেই ইন্ডিয়া-ভারত বিতর্কের দিকে ইশারা করে মোদী সরকারের নাম বদল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শায়েরি আওড়ে বলেন, ‘বদলনা হ্যায় তো হালাত বদলো, অ্যায়সে নাম বদলনে সে কেয়া হোতা হ্যায়?’
মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে খড়্গে আরও বলেন, ‘‘সংবিধান পরিষদের ১১টি অধিবেশনে কোনও বাধাবিঘ্ন আসেনি। অম্বেডকর বলেছিলেন, কংগ্রেসের জন্যই তা সম্ভব হয়েছিল। সে সময়ের লোকজন সবাইকে নিয়ে চলতেন। তখন দেশের ভিত তৈরির কাজ হচ্ছিল। ভিতের মধ্যে যে পাথর থাকে, তা দেখা যায় না। দেওয়ালে যে নাম লাগান, সেটাই দেখা যায়।’’ সংবিধানের গুণগান করে খড়্গে বলেন, “সংবিধান নির্মাতাদের দেওয়া সংবিধানই আমাদের এখনও একত্রিত রেখেছে। এই সংবিধানই সবাইকে ভোটাধিকার দিয়েছে। স্বাধীনতার আগে শুধুমাত্র করদাতা, জমির মালিক, শিক্ষিতরাই ভোট দিতে পারতেন। জওহরলাল নেহরু, বাবাসাহেব অম্বেডকর সকলের জন্য ভোটাধিকার দিলেন। একজন ধনী, ধরা যাক আদানি, তাঁরও একটি ভোটের যে মূল্য, গরিব মানুষের ভোটেরও সেই একই মূল্য।”