Firecrackers

গত বছর প্রাণ হারান ৩৯, যে কোনও সময় হতে পারে বিস্ফোরণ! জীবন ‘বাজি’ রেখে পেটের টানে বাজি তৈরি

আলোর উৎসবে আতশবাজির চাহিদা তুঙ্গে থাকে। কিন্তু এ বছর শিবকাশির বাসিন্দাদের মুখভার। বাজিতে বেরিয়াম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর জেরে মার খেয়েছে উৎপাদন।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৪:২৮
বাজি তৈরি করছেন কর্মীরা।

বাজি তৈরি করছেন কর্মীরা। প্রতীকী ছবি।

রোজ সকালে ওঁরা প্রাণ হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন। বেঁচে কি ফিরতে পারব? এই আশঙ্কাতেই ডুবে থাকে ওঁদের মন-প্রাণ। তার পর যখন দিনের শেষে ঘরে ফেরেন, তখন মনে মনে ভাবেন, আরও একটা দিন বেঁচে গেলেন। এ ভাবেই দিন গুজরান করছেন তামিলনাড়ুর শিবকাশিতে আতশবাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত বাসিন্দারা।

আর ক’দিন বাদেই দীপাবলি। আলোর উৎসবে আতশবাজির চাহিদা তুঙ্গে থাকে। কিন্তু এ বছর শিবকাশির বাসিন্দাদের মুখভার। বাজিতে বেরিয়াম (এক ধরনের ধাতব পদার্থ) ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর জেরে মার খেয়েছে উৎপাদন। সঙ্গে বাজি বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মন ভাল নেই। গত বছরই এলাকার একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ৩৯ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

তবে বিস্ফোরণের ভয় বুকে নিয়েই পেটের টানে রোজ মরণফাঁদে পা গলিয়ে বাজি তৈরি করে চলেছেন তাঁরা। শিবকাশির একটি বাজি কারখানার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত ৫৬ বছর বয়সি কস্তুরী। বাড়িতে বাজি তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ভয়ঙ্কর পরিণতির পরও সংসারের অর্থকষ্ট দূর করতে এখনও বাজি তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছেন ওই প্রৌঢ়া।

ইন্ডিয়া টুডে-কে তিনি বলেন, ‘‘সে সময় আমরা বাড়িতে বাজি তৈরি করতাম। কিন্তু পরে কড়াকড়ির জেরে আমাদের সরঞ্জাম দেওয়া হত না। তাই কারখানায় গিয়ে কাজ করতে হয়।’’ কস্তুরীদেবী আরও বলেন, ‘‘আমার এক মেয়ে ও তিন নাতনি রয়েছে। আমি যদি কাজ না করি ও পারিশ্রমিক না পাই, তা হলে আমার পরিবার ভুগবে।’’

কস্তুরীর মতো একই হাল ৩৭ বছর বয়সি বিজয়লক্ষ্মীর। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করার পর থেকেই বাজি তৈরির কারখানার সঙ্গে যুক্ত তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ও আমার স্বামী, দু’জনেই বাজি তৈরির কারখানায় কাজ করি। সকালে যখন বাড়ি থেকে বেরোই, আতঙ্কে থাকি। যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরি, একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আরও একটা দিন বেঁচে গেলাম। এই কাজে ঝুঁকি রয়েছে, এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’’

কারুপাসামি নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘আতঙ্ক রয়েছে, কিন্তু কিছু করার নেই। যখন দুর্ঘটনার খবর পাই, খুব দুশ্চিন্তা হয়। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে আমাদের কারখানায় গিয়ে বাজি তৈরির কাজ করতে হয়।’’ এ কাজের জন্য দিনে তাঁরা আট ঘণ্টা পরিশ্রমের পর ৪০০-৫০০ টাকা করে পান।

অন্য দিকে, বাজি তৈরির কারখানায় কাজের ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে, সে কারণে অনেকেই এ কাজ ছেড়ে অন্য কাজ খুঁজছেন। এর ফলে কর্মী হারাচ্ছে ওই এলাকার বাজি কারখানাগুলি। যার জেরে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement