(বাঁ দিকে) উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির হাসপাতালের ক্ষতিগ্রস্ত ওয়ার্ড এবং শুক্রবার রাতে হাসপাতাল চত্বরে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা রোগীর পরিজনদের (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে শুক্রবার রাতে এক সরকারি হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও ১৬ জন শিশু। উত্তরপ্রদেশের একাধিক হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। চলছে বাঁচানোর চেষ্টা। কী কারণে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সরকার। ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় জমা পড়বে সেই রিপোর্ট। তবে তার আগেই বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করেছে। রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঘিরে অভিযোগ। এমনকি এক নার্সের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগও উঠে এসেছে। উঠেছে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাইপ জোড়া লাগানোর মতো অভিযোগও।
শুক্রবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ আগুন লেগেছিল ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজের সদ্যোজাত (নিকু) বিভাগে। হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ঠিক ভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠে আসছে। একাংশের অভিযোগ, দু’বছর আগেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেগুলি ঠিক মতো কাজ করেনি বলে অভিযোগ এক প্রত্যক্ষদর্শীর। তাঁর দাবি, হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করলে ১০ সদ্যোজাতের মৃত্যু আটকানো যেত।
আবার হাসপাতালের এক নার্সের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ উঠে আসছে। ভগবান দাস নামে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনি ওই ওয়ার্ডেই ছিলেন। তাঁর সন্তানকে ওই ওয়ার্ডে রাখা ছিল। তাঁর অভিযোগ, আগুন লাগার ঠিক আগেই ওয়ার্ডে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়েছিলেন এক নার্স। দেশলাই কাঠির আগুন ব্যবহার করে নাকি তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাইপ জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। নিকু ওয়ার্ডে সাধারণত বেশি মাত্রায় অক্সিজেন রাখা থাকে। ওই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, দেশলাই কাঠি ধরানোর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে গিয়েছিল ওয়ার্ডে।
নিকু ওয়ার্ড হল সদ্যোজাতদের জন্য বিশেষ আইসিইউ ব্যবস্থা। সেখানে ১৮টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার সময়ে দ্বিগুণের বেশি সদ্যোজাতকে রাখা হয়েছিল সেখানে। কানপুরের এডিজি অলোক সিংহ জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে ৪৭ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ১০ জনকে বাঁচানো যায়নি। দুর্ঘটনার পর পরই ঝাঁসির সিনিয়র পুলিশ সুপার সুধা সিংহ জানিয়েছিলেন, মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি জানতে পারেন, ওই ওয়ার্ডে ৫২-৫৪ জন শিশুকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। ফলে ঠিক কত জনকে সেখানে ভর্তি রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশি স্তর থেকেই একাধিক বক্তব্য উঠে এসেছে এখনও পর্যন্ত।
কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখার জন্য ঝাঁসির ডিভিশনাল কমিশনার এবং ডিআইজিকে নির্দেশ দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। যে হেতু নিকু ওয়ার্ডে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে, তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। ডিভিশনাল কমিশনার এবং ডিআইজিকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কী কারণে দুর্ঘটনা, তার আভাস থাকতে পারে ওই রিপোর্টে।