ordinance

দিল্লির আমলাদের রাশ হাতে রাখতে অর্ডিন্যান্স কি অসাংবিধানিক? প্রশ্ন সুপ্রিম-নির্দেশের পরে

গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লি সরকারের। তার পরেই অর্ডিন্যান্স জারি করে মোদী সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৭:১১
SC says, five-judge constitution bench will examine whether Parliament can abrogate the constitutional principles of governance

নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল। — ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল, তার সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও। এমনই বার্তা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ কেন্দ্রের ওই বির্তকিত অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল।

শুক্রবার সেই নির্দেশের প্রতিলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, তাই সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি স্থানান্তরিত হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য— ‘‘জন পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শাসনের সাংবিধানিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করা যায় কি না, সাংবিধানিক বেঞ্চ তা বিবেচনা করবে।’’ এমনকি, সংসদ সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে বদল ঘটিয়ে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির শাসন ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা-ও ‘সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচার্য’ বলে জানানো হয়েছে তিন বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশে। ১০ পাতার ওই নির্দেশ বলা হয়েছে, অর্ডিন্যান্সের ৩এ ধারা সরাসরি দিল্লি সরকারের হাতে থাকা ৪১ নম্বর ধারা (পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষমতা)-য় হস্তক্ষেপ করছে। ফলে তার সাংবিধানিক বৈধতা বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। ওই রায়ের পরেই গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসাবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর)।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য মোদী সরকারের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় অবিজেপি দলগুলির সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আবেদন জানিয়েছেন, ওই অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ী রূপ দিতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে বিরোধী দলগুলি যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার বিরোধিতা করে। মে মাসেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেজরী।

তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে সহায়তার আশ্বাস মিললেও প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে দাঁড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকের আগে রবিবার কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয় বিতর্কিত ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী’ আইনে পরিণত করতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে তার বিরোধিতা করা হবে। তার পরেই বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেজরী। প্রসঙ্গত, জল্পনা রয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশনেই ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী আইনের’ রূপ দিতে বিল পেশ করবে মোদী সরকার।

Advertisement
আরও পড়ুন