মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদ এবং শ্রীকৃষ্ণ মন্দির। — ফাইল চিত্র।
মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির লাগোয়া শাহি ইদগাহ মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার এবং জমি মাপজোকের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এই রায় দিয়েছিল। তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মুসলিম পক্ষ। সমীক্ষার উপর স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়েছিলেন শাহি মসজিদ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুক্রবার শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চে ৯ জানুয়ারি থেকে হবে এই আবেদনের শুনানি।
হিন্দু পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন, বিষ্ণুশঙ্কর জৈন, প্রভাস পাণ্ডে এবং দেবকী নন্দন মথুরার শাহি ইদগাহকে ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি’ বলে চিহ্নিত করে সেখানে জমি মাপজোক এবং বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার দাবি তুলেছিলেন ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। যার বিরোধিতা করেছিল মুসলিম পক্ষ। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ময়াঙ্ক কুমারের নেতৃত্বাধীন ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এক জন কোর্ট কমিশনারের পর্যবেক্ষণে সমীক্ষার কাজ করতে হবে শাহি ইদগাহের বিতর্কিত ১৩.৩৭ একর জমিতে।
গত ২৯ অগস্ট হিন্দু পক্ষের আবেদন মেনে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদে ভিডিয়ো সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি পীযূষ অগ্রবাল সেই সমীক্ষা তত্ত্বাবধানের জন্য এক আইনজীবীকে কোর্ট কমিশনার এবং দু’জনকে সহকারী কোর্ট কমিশনার নিযুক্ত করেছিলেন। আগামী চার মাসের মধ্যে সমীক্ষার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু উচ্চতর বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। এর পর মামলাটি ফেরত গিয়েছিল হাই কোর্টে।
মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ (যা কাটরা কেশবদাস নামে পরিচিত) এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে শাহি ইদগাহ মসজিদ। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ইদগাহের ওই জমিতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে ছিল প্রাচীন কেশবদাস মন্দির। কাশীর ‘আসল বিশ্বনাথ মন্দিরের’ মতোই মথুরার মন্দিরটিও ধ্বংস করেছিলেন মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব। অভিযোগ, অওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৯ থেকে ১৬৭০ সালে তৈরি করা হয়েছিল মসজিদটি। কাটরা কেশবদাস মন্দিরের ১৩.৩৭ একর জমিতে। সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদের জেরেই সমীক্ষার নির্দেশ।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মতো মথুরা শাহি ইদগাহেও রয়েছে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’। সেগুলির সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির দাবি ঘিরে একটি মামলা ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারাধীন। সেই মামলায় রায় ঘোষণার আগেই ইদগাহ থেকে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’ নষ্ট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে পুরো চত্বরটি সিল করার দাবিতে এর পর নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল মথুরা আদালতে। কিন্তু হিন্দু পক্ষের সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। প্রসঙ্গত, এর আগে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার’ নির্দেশ দিয়েছিল বারাণসী জেলা আদালত। এর পর মুসলিম পক্ষের আবেদন খারিজ করে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ বহাল রেখেছিল।