সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ। —ফাইল চিত্র।
সম্ভলে শাহি জামা মসজিদে আদালতের সমীক্ষার নির্দেশ ঘিরে অশান্তি এবং মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গড়লেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দবেন পটেল। লখনউয়ের রাজভবন থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবেন্দ্রকুমার অরোরা এই তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
প্রসঙ্গত, সম্ভলের স্থানীয় আদালতে একটি মামলায় দাবি করা হয়, সেখানকার শাহি মসজিদ মোগল সম্রাট বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছিল। গত ১৯ নভেম্বর মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিম্ন আদালতের বিচারক আদিত্য গোস্বামী কমিশনার নিয়োগ করে মসজিদে সেই দিনই সমীক্ষার নির্দেশ দেন। গত শনিবার প্রথম দিনের সমীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে গত রবিবার দ্বিতীয় বার সমীক্ষার সময়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির স্থানীয় সাংসদ জ়িয়াউর রহমান বর্কেক নামে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এই ঘটনায় উস্কানির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে। এই পরিস্থিতিতে শাহি মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার নির্দেশের বিরোধিতা করে মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে শুনানির জন্য মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে।
শাহি মসজিদ কমিটির দাবি, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধুমাত্র অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাধীনতার আগে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে। এই নীতি মেনে চললে, কোনও মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষার প্রশ্নই ওঠে না।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির রায় দিলেও এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আইন পাশের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবি চহ্বাণ লোকসভায় যে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্বের কথা বলেছিলেন, তা-ও সেই রায়ে লেখা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছিল বিচারপতি চন্দ্রচূড় সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন। অথচ পরে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দিলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে চন্দ্রচূড় তাতে স্থগিতাদেশ দেননি। এমনকি জ্ঞানবাপী মসজিদের মধ্যে পুজোর নির্দেশেও তিনি ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। ফলে আগামী দিনে আরও ধর্মস্থান ঘিরে বিতর্ক আদালতে পৌঁছনোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।