লোকসভা সাংসদের আনুকূল্যেই লোকসভা হানা হানাদারদের। ছবি: পিটিআই।
অতিথির ছদ্মবেশে সংসদে প্রবেশ করেছিল হানাদারেরা। বুধবার দুপুরের ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ জানতে পেরেছে, গোটা ঘটনাটির নেপথ্যে যিনি, তিনি আবার লোকসভার ভিতরে ঢোকার অনুমতিপত্র জোগাড় করেছিলেন লোকসভারই এক সাংসদকে ধরে।
সংসদের নিয়ম, প্রবেশপত্র বা অনুমতিপত্র থাকলে কেউ প্রবেশ করতে পারেন সংসদ ভবনে। উঁচু গ্যালারিতে বসে দেখতে পারেন লোকসভা, রাজ্যসভার অধিবেশন। আবার এই প্রবেশাধিকার পাওয়া যায় সাংসদের আনুকূল্যেও। সাংসদদের অতিথি হলেও সংসদের গ্যালারিতে গিয়ে বসা যায়। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তেমনই এক সাংসদের অতিথি হয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করেছিলেন সাগর শর্মা নামের এক যুবক। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার লোকসভায় রঙিন ধোঁয়ার বোমা ফাটিয়ে হুলস্থুল ফেলে দেওয়ার অন্যতম চক্রী তিনিই।
কিন্তু কে এই সাগর শর্মা? লোকসভার কোন দলের সাংসদ তাঁকে সংসদের প্রবেশাধিকার পাইয়ে দিয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সাগর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। বয়সে তরুণ। বাড়ি কর্নাটকে। দিল্লিতে তিনি এসেছিলেন সুদূর মাইসুরু থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর থেকে সংসদে ঢোকার যে প্রবেশপত্র উদ্ধার করেছে তারা, তাতে লেখা রয়েছে কর্নাটকেরই এক সাংসদের নাম। সেই সাংসদ আবার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিরই সাংসদ। তাঁরই আনুকূল্যে সংসদে ঢোকার প্রবেশপত্র পেয়েছিলেন সাগরেরা।
কর্নাটকের ওই বিজেপি সাংসদের নাম প্রতাপ সিম্হা। সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করে ২০১৪ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন প্রতাপ। নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখে আগেই বিজেপি নেতৃত্বের চোখে পড়েছিলেন। পরে ২০১৪ সালে যখন মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ বানিয়ে লোকসভা ভোটে লড়াই শুরু করছে বিজেপি, তখন বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রতাপ। তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণও হয়। তার পর থেকে পর পর দু’বার মাইসুরুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন এবং জিতেছেন প্রতাপ।
কর্নাটকের রাজনীতিতে শুরু থেকেই বিতর্কিত প্রতাপ। তাঁর তীব্র হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলাম বিরোধিতার জন্য বিভিন্ন মহলে সমালোচিতও। টিপু সুলতানের জন্মদিন পালনে কর্নাটক সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন প্রতাপ। সে সময় সিদ্দারামাইয়া সরকারের সমালোচনা করে বলেছিলেন, এই সরকার জেহাদিদের উৎসাহিত করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর সরকারের অন্ধ ভক্ত বলেই তাঁকে চেনেন তাঁর বিজেপির সহকর্মীরা। যদিও বুধবার নতুন সংসদ ভবনে তাঁর অনুমতিতেই প্রবেশ করে কী ভাবে ওই রং বোমা বিস্ফোরণ ঘটালেন প্রতিবাদীরা, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই।