Trade Deal

‘ভারত প্রথম’! বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে এই নীতিতেই জোর, জানালেন জয়শঙ্কর

জয়শঙ্কর মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, যে কোনও রকম বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘ভারত প্রথম’ এবং ‘বিকশিত ভারত’-এর নীতিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:২২
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। — ফাইল চিত্র।

ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে ভারত। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক অনুষ্ঠানে এমনটাই জানালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি এ-ও জানালেন যে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এখন শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার নয়, বরং ‘কৌশলগত’ পথ। সেই কৌশলগত কারণেই উপসাগরীয় এবং পশ্চিমের দেশগুলির সঙ্গেও এই চুক্তি করে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা চলছে। শুল্ক-যুদ্ধের আবহে আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে আসছেন আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। তার আগে বিদেশমন্ত্রীর এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ওই অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। বর্তমান দুনিয়ায় কিসের ভিত্তিতে সেই বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে, এই নিয়ে ভারতের নীতিই বা কী, তা নিয়েও কিছু কথা বলেছেন তিনি। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, বর্তমান দুনিয়ায় অনিশ্চয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবহে ভারতও কাদের সঙ্গে কী ভাবে বাণিজ্য করবে, সেই রীতিনীতি, শর্তে বদল আনছে। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য চুক্তি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেই বিষয়টির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতের অবশ্যই বোঝা উচিত।’’

আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক চাপায় ভারত। একই কাজ করার কথা জানিয়েছে আমেরিকাও। গত কয়েক দিন ধরেই আমেরিকার সঙ্গে এই শুল্ক চাপানো নিয়ে দর কষাকষি চলছে ভারতের। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যে সমস্ত দেশ আমেরিকার পণ্যে আমদানি শুল্ক চাপাচ্ছে, সেই সমস্ত দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপাবে আমেরিকা। আগামী ২ এপ্রিল নয়া এই শুল্ক নীতি চালু হওয়ার কথা। পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর নীতি থেকে বাদ পড়বে না ভারত। ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘ভারত আমাদের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনওই ছিল না।’’ এই আবহে আগামী সপ্তাহে ভারতে আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি দল আসছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। ওই সূত্রেই জানা গিয়েছে, ট্রাম্প যে পাল্টা চড়া শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন, তাকে প্রশমিত করতে ভারত ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বসে আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে কয়েকটি চিহ্নিত করতে পারে। সেই পণ্যগুলিতে কর কম করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হতে পারে। যাতে আমেরিকার সঙ্গে একটি ‘আগাম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি’ (আর্লি হারভেস্ট ডিল, যার পরবর্তী ধাপ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) দ্রুত করা যায়, সে জন্য এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই চুক্তি নিয়েই আগাম ইঙ্গিত দিয়ে রাখছেন জয়শঙ্কর। তিনি বার্তা দিতে চাইছেন যে, কৌশলগত কারণেই আমেরিকা থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যে কর কম করার ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।

ভারত এখন তিনটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউকের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতের। আরও কয়েক দেশের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো হবে। এ সব চুক্তির ক্ষেত্রে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন যে ভাবে দুনিয়ায় অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এ ধরনের প্রচেষ্টাকে মূল্য দিতে হবে। এই ধরনের চুক্তির কী সুবিধা, অসুবিধা, তা দেখতে হবে। পদক্ষেপ করলে কী মূল্য চোকাতে হবে, তা-ও দেখতে হবে।’’ তিনি মনে করেন, এই ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি উভয় পক্ষকেই সুবিধা দিতে পারে। তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, যে কোনও রকম বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘ভারত প্রথম’ এবং ‘বিকশিত ভারত’-এর নীতিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এর আগে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও একই কথা জানিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ভারতের উপরে পাল্টা চড়া শুল্ক বসানোর হুঁশিয়ারির মধ্যেই বাণিজ্যমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন। এই বিষয়ে পীযূষ জানান, তাঁর সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিরের ভবিষ্যতমুখী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভারত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’, ‘বিকশিত ভারত’-এর পাশাপাশি সার্বিক রণকৌশলগত বোঝাপড়ার নীতি মেনে চলবে বলেই জানিয়েছিলেন গয়াল। এ বার জয়শঙ্করও একই কথা জানালেন।

জয়শঙ্কর আরও জানিয়েছেন, এই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ভারতের কৌশল অনেকটাই বদলেছে। আগে এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে মূলত বাণিজ্য চুক্তি করত ভারত। এখন উপসাগরীয় এবং পশ্চিমের দেশগুলির সঙ্গেও সেই চুক্তি করা হচ্ছে, আর এ ভাবেই কৌশলগত ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গয়াল যখন আমেরিকায়, সে সময়েই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একতরফা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ভারত শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, ভারত আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যে বিপুল পরিমাণে শুল্ক চাপায়। আমেরিকাও ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা চড়া শুল্ক চাপাবে। সূত্রের খবর, নয়াদিল্লির আশা, ভারত থেকে আমদানি করা জিনিসপত্রের উপর শুল্ক চাপানোর ক্ষেত্রে তুলনামূলক শিথিল নীতি নেবে আমেরিকা।

Advertisement
আরও পড়ুন