শুক্রবারে অযোধ্যা ধাম স্টেশনের ভিড়। ছবি: পিটিআই।
সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন। আগে থাকতেই বলা হয়েছিল এই সময়ে সাধারণ মানুষ যেন অযোধ্যায় না-আসেন। কিন্তু ট্রেন বা বিমান ধরে অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন এখানে। একের পর এক শোভাযাত্রা এসে চলেছে। মোটরবাইক, সাইকেলে এসেই চলেছেন ভক্তেরা। গরুর গাড়ি করেও অনেক সাধুসন্ত আসছেন। সেই আগমন রুখতে না পারলেও, অযোধ্যায় ট্রেন থামানো বন্ধ হয়ে গেল। নগর প্রশাসনের অনুরোধ মেনে শুক্রবার রাত থেকেই স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় উত্তর রেল। অযোধ্যাগামী অনেক ট্রেনের যাত্রা আগের বিভিন্ন স্টেশনে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এই পথ দিয়ে যাওয়া ট্রেনকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য দিকে।
অযোধ্যা শহরের কাছাকাছি দু’টি রেলস্টেশন। একটি অযোধ্যা ধাম জংশন, অন্যটি ফৈজাবাদ জংশন। দু’টি স্টেশনেই শনিবার থেকে ট্রেন আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কবে চালু হবে তা জানেন না অযোধ্যা স্টেশনের রেলকর্মীরাও। তবে সোমবার পর্যন্ত যে চলবে না তা নিশ্চিত। রেলকর্মীরা বলছেন, কত দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে সে ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে কোনও কোনও সূত্র বলছে, বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবেই। এই সময়ে যাঁদের টিকিট কাটা রয়েছে, তাঁরা পুরো টাকা ফেরত পাবেন বলেও জানিয়েছেন এক রেলকর্মী।
অযোধ্যা শহরের যা পরিস্থিতি তাতে জেলা প্রশাসনের কাছে বড় চিন্তা সোমবারের ভিড় নিয়ন্ত্রণ। রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, নিমন্ত্রিতরা ছাড়া আর কেউ আসতে পারবেন না এই সময়ে। মন্দির দর্শন দূরের কথা, শহরেও অতিরিক্ত ভিড় করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বেশ কয়েক দিন আগেই যাঁরা শহরে ঢুকে পড়েছেন তাঁরা রয়ে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে এখন সাধু, সন্ত, ভক্তেরা এসেই চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে যে নিমন্ত্রিতেরা ট্রেনে করে শনি ও রবিবারে ঢুকবেন বলে ঠিক ছিল, তাঁরা অনেকেই পথে আটকে পড়েছেন। এখন তাঁদের আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। শনিবার করসেবকপূরমে গিয়ে দেখা গেল বিশেষ অতিথিদের আনার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিষদের কর্তা গিরিধারী পাণ্ডে বললেন, ‘‘আমরা অতিথিদের যে কোনও ট্রেন ধরে সুলতানপুর চলে আসতে বলছি। সেখান থেকে গাড়ি করে অযোধ্যায় নিয়ে আসা হবে।’’
অন্য দিকে, শনিবার সকাল থেকেই রামলালার দর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নতুন মন্দির হচ্ছে সেখানেই রয়েছে রামলালার অস্থায়ী ছাউনি। ২০২০ সালের ৫ অগস্ট এখানে মূর্তি রাখা হয়েছিল। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে ওই মূর্তি মন্দিরের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগে আর কোনও দর্শনার্থী রামলালার কাছে যেতে পারবেন না। মন্দিরে যাওয়ার সব রাস্তাই শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে রাস্তার মুখের ভিড় কমানো যায়নি।
মন্দির সাজানোর কাজ যে এখনও শেষ হয়নি তা স্পষ্ট। নির্মাণকর্মীরাও রাস্তা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যে রাস্তাটি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঢুকবেন তার সাজ এখনও শুরুই হয়নি। এই রাস্তা দিয়ে আরএসএসের সর-সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত এবং অন্য অতিথিরাও ঢুকবেন। তবে মন্দিরে যাওয়ার অন্যান্য রাস্তা ফুল দিয়ে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ।
যে মন্দিরের উদ্বোধন হবে সোমবার তার একটি মাত্র তলা এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। তারও অনেক কাজ বাকি। সেই নির্মাণকাজও শনিবার থেকে একেবারে বন্ধ। শুধু সাজানোর কাজ চলছে। বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মন্দির এবং নতুন মূর্তির অভিষেক পর্ব রবিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়ে যাবে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলা নবগ্রহ যজ্ঞও রবিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। ১২১ জন পূজারী এই সব ধর্মীয় আচার চালাচ্ছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই পর্বের প্রধান পুরোহিত গণেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড়।