শরদ পওয়ারের বাসভবনে সুপ্রিয়া সুলে এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
কাকা-ভাইপোর দ্বন্দ্বে এনসিপিতে ভাঙনের আবহে শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে শরদের বাড়িতে ওই বৈঠক হয়। সেখানে শরদ-কন্যা তথা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের পাশাপাশি জিতেন্দ্র অহয়াড়, পিসি চাকোর মতো নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আধ ঘণ্টার বৈঠকের পর এনসিপির তরফে সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়, ‘‘দলের বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে শরদ পওয়ারের লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথাও জানিয়েছেন।’’
গত রবিবার শরদের ‘বিদ্রোহী’ ভাইপে অজিত-সহ ন’জন এনসিপি বিধায়ক মহারাষ্ট্রের শিন্ডেসেনা-বিজেপি জোট সরকারের মন্ত্রিপদে শপথ নিয়েছিলেন। এর পর বুধবার মুম্বইয়ের বান্দ্রায় এমইটি কলেজ অডিটোরিয়ামে বিদ্রোহী শিবিরের বৈঠকে শরদের সরিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদে অজিতকে নির্বাচিত করার কথা ঘোষণা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দিল্লি এসে এনসিপির ওয়ার্কিং কমিটি এবং জাতীয় কর্মপরিষদের বৈঠক করেন তিনি। সেখানে অধিকাংশ সদস্যই শরদের নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশ করেন।
বুধবার বান্দ্রায় অজিতের বৈঠক চলাকালীন মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে নরিম্যান পয়েন্টে তাঁর রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত যশবন্ত রাও চহ্বাণের নামাঙ্কিত প্রেক্ষাগৃহে অনুগামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন শরদ। মাত্র দু’মাস আগে, গত ২ মে এখানেই এনসিপির বৈঠকে নাটকীয় ভাবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সে দিন দলের সাংসদ, বিধায়ক, পদাধিকারীরা একযোগে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শরদ পওয়ারের কাছে অনুনয়-বিনয় শুরু করেছিলেন। কিন্তু বুধবার তাঁর ম়ঞ্চে দেখা গিয়েছে এনসিপির মাত্র ১৪ বিধায়ককে। অন্য দিকে, অজিতের বৈঠকে হাজির বিধায়কের সংখ্যা ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি।
এনসিপির পতাকা এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’-র অধিকার দাবি করে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে অজিত গোষ্ঠী। ভাইপোর এমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা আগেই আঁচ করেছিলেন কুশলী মরাঠা রাজনীতিক শরদ। মঙ্গলবার সকালেই নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি হলফনামা দিয়ে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে তাঁর শিবির। তাঁদের না জানিয়ে অজিত গোষ্ঠীকে যাতে একতরফা ভাবে এনসিপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ দেওয়া না হয়, সে জন্যই কমিশনে হলফনামা দেওয়া হয়।
কোনও রাজনৈতিক দলে ভাঙনের সময় দলের পতাকা এবং নির্বাচনী প্রতীক বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কার্যত ‘বিচারবিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল’-এর ভূমিকা পালন করে। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সমর্থক বিধায়ক, সাংসদ-সহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সাংগঠনিক পদাধিকারীদের তালিকা পরীক্ষা করে কয়েক দফার শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে কমিশন। কোনও গোষ্ঠীর গরিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তাদের নাম এবং প্রতীক ব্যবহারের অধিকার দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। সাম্প্রতিক কালে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার ভাঙনের সময় উদ্ধব ঠাকরের আপত্তি উড়িয়ে একনাথ শিন্ডের গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কমিশন। শরদ শিবির বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কমিশনের বিধি অনুযায়ী এনসিপির ‘নাম ও নিশান’ তাদের হাতেই থাকবে।