প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন বীরেনকুমার বসাক। ছবি সৌজন্য টুইটার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিচ্ছেন। আর তা শুনছেন সর্বধর্মের মানুষ। শাড়িতে এমন অলঙ্করণ ফুটিয়ে তুলে সেই শাড়িই উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি বীরেনকুমার বসাক। এ রাজ্যেরই নদিয়া জেলার তাঁতি তথা কাপড় ব্যবসায়ী। এ বছরের পদ্ম সম্মান প্রাপকও বটে।
কয়েক দিন আগেই দিল্লিতে পদ্ম সম্মান দেওয়া হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বীরেন। পদ্মশ্রী পেয়েছেন তিনি। তার পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর হাতে তৈরি সেই শাড়ি। যা পেয়ে আপ্লুত মোদী টুইট করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা বীরেন কুমার বসাক। খ্যাতনামী তাঁতি। শাড়িতে ভারতের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে অপূর্ব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাকে সেই শাড়ি উপহারও দিয়েছেন তিনি। আসাধারণ। মন ছুঁয়ে গিয়েছে।’
নদিয়ার ফুলিয়ার বাসিন্দা বীরেন। বাংলার বেশ পরিচিত নাম। শুধু বাংলাই নয়, তাঁর শাড়ির খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশেও। বীরেনের শাড়ির গ্রাহকের তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সঙ্গীতজ্ঞ উস্তাদ আমজাদ আলি খান, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকরের মতো ব্যক্তিত্বরা।
সত্তরের দশকে এক টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলেন বীরেন। এখন তাঁর বার্ষিক মুনাফা ২৫ কোটি টাকা। পদ্ম সম্মান পেয়ে নিজের পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিলেন বীরেন। কী ভাবে লড়াই করে তিনি নিজের ব্যবসাকে আজ এ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তারই স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন বছর সত্তরের বীরেন।
Shri Biren Kumar Basak belongs to Nadia in West Bengal. He is a reputed weaver, who depicts different aspects of Indian history and culture in his Sarees. During the interaction with the Padma Awardees, he presented something to me which I greatly cherish. pic.twitter.com/qPcf5CvtCA
— Narendra Modi (@narendramodi) November 13, 2021
ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শাড়ির ব্যবসায় নেমেছিলেন তিনি। বীরেন বলেন, “ভোরবেলা উঠে প্রতি দিন ফুলিয়া থেকে ট্রেন ধরে কলকাতায় যেতাম দুয়ারে দুয়ারে শাড়ি বিক্রির জন্য। সে সময় শাড়ির দাম ১৫ থেকে ৩৫ টাকা ছিল।” মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খদ্দেরের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে যখন শাড়ির চাহিদা বাড়তে শুরু করল রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও তাঁর শাড়ির পরিচিতি বাড়তে থাকে। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই নিজের সাম্রাজ্য তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। সেই সাম্রাজ্যের খ্যাতি আজ বিশ্বজোড়া।
শুরুতে ৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন বীরেন। এখন ২৪ জন কর্মী এবং ৫ হাজার তাঁতি নিয়ে কাজ করেন তিনি। তাঁর মধ্যে দু’হাজার মহিলা রয়েছেন। তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলাই বীরেনের লক্ষ্য। তাঁর কথায়, “এই তাঁতিরা উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের এখন স্বনির্ভর। আমার এই সম্মান তাঁদেরই প্রাপ্য। আমি তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।”
২০১৩-তে তাঁর হস্তশিল্প এবং দক্ষতার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বীরেন। হ্যান্ডলুম শাড়িতে মহাকাব্য রামায়ণের কাহিনি ফুটিয়ে তোলায় ব্রিটেনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক ডক্টরেট উপাধিও পেয়েছেন বীরেন।