Odisha Train Accident

মানুষের হাতেই করমণ্ডল বিপর্যয়! দোষীরা চিহ্নিত, বললেন রেলমন্ত্রী, ঘোষণা: রিপোর্ট প্রকাশ্যে শীঘ্রই

রবিবার দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দেন রেলমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে।... এই কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১৭:১০
People responsible for the balasore train accident identified, Rail minister Ashwini Vaishnaw said

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

যান্ত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতি নয়, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মানুষকেই দায়ী করছে রেলের তদন্ত! দুর্ঘটনার ৪০ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করে দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। খুব শীঘ্রই তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসবে জানিয়ে রেলমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘এই কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছে।’’

রবিবার সকালে ওড়িশার বাহানগা বাজারের দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সরকারি সংবাদমাধ্যম দূরদর্শনকে সাক্ষাৎকার দেন রেলমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, “রেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিশনার (সিআরএস) গতকাল দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন... সিআরএস সবার সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং দ্রুত তদন্ত এগিয়েছেন। দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে।’’ এর পরই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই কাজ যাঁরা ঘটিয়েছেন তাঁদেরও চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছে। সিআরএস তদন্ত রিপোর্ট, এই দুর্ঘটনার কারণ খুব শীঘ্রই জানা যাবে।’’

Advertisement

তা হলে কি চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার নেপথ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনা উড়িয়েই দিলেন রেলমন্ত্রী? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য অশ্বিনী বলেন, “এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন তিনি।

মন্তব্য করবেন না জানানোর পরেও অশ্বিনী বলেন, “যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁরা পয়েন্ট মেশিনে, যেখান থেকে লাইন নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণেই এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। কিন্তু নিরপেক্ষ সংস্থার দ্বারা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করব।”

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ‘আপ মেন লাইন’ দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। প্রায় একই সময়ে ‘ডাউন মেন লাইন’ দিয়ে ফেরার কথা ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের। রেলের একটি সূত্রের দাবি, ওই দু’টি ট্রেনের কোনওটিরই দুর্ঘটনাস্থল বাহানগা বাজার স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়। তাই ‘থ্রু’ চলে যাওয়ার জন্য দু’টি ট্রেনেরই সিগন্যাল দিয়েছিলেন স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার। তার আগেই তিনি প্যানেল থেকে সিগন্যাল দিয়ে দু’টি মালগাড়িকে ‘ডাউন’ ও ‘আপ’ লুপলাইনে দাঁড় করিয়েছিলেন। সঠিক সময়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছাকাছি আসে। সিগন্যাল সবুজ দেখে দু’টি ট্রেনই নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যায়। রেলের ওই সূত্রের দাবি, এর পরেই আপ মেন লাইনের ‘১৭এ পয়েন্ট’ থেকে লুপ আপ লাইনে ঢুকে পড়ে করমণ্ডল। তার পর সেটি সজোরে ধাক্কা মারে ওই লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির পিছনে। বেলাইন হওয়া করমণ্ডলের অন্তত ১৭টি বগি ছিটকে পড়ে এ দিক-ও দিক। তার ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওয়াগনের উপরে। রেল জানিয়েছে, ঠিক তখনই ডাউন মেন লাইনে ঢুকে পড়েছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। বেলাইন হওয়া করমণ্ডলের কয়েকটি কামরা সেই লাইনের উপর গিয়ে পড়ে। তার জেরে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের দু’টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়।

রেলের প্রাথমিক রিপোর্টে শনিবারই বলা হয়েছিল, ঘটনাস্থলের ১৭এ পয়েন্টটি লুপ লাইনে ঘোরানো ছিল। ফলে করমণ্ডল ঢুকে পড়ে লুপ লাইনে। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টের অন্য একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘প্যানেল’-এ (যেখান থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং যার রেকর্ড থেকে যায়) কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। প্যানেল দেখে পরিদর্শক কমিটির সদস্যদের মনে হয়েছে, সিগন্যাল ঠিক ভাবে দেওয়া হয়েছিল দু’টি ট্রেনের জন্যই। প্যানেলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, করমণ্ডলের সিগন্যাল বা পয়েন্ট কোনও ভাবেই আপ লুপ লাইনে ঘোরানো ছিল না। বরং তা সোজা চেন্নাই যাওয়ার জন্য সঠিক ভাবে দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্তদের তরফে কোথাও যে একটা গাফিলতি কিংবা তালমিলের অভাব ছিল, তার ইঙ্গিত ছিল শনিবারের রিপোর্ট এবং প্যানেলেই। রবিবার রেলমন্ত্রীও দুর্ঘটনার জন্য কার্যত মানুষের হাতই রয়েছে বলে জানিয়ে দিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement