কম মূল্যের তেল কিনে ২০০০ টাকার নোট দিলে খুচরো দেওয়া সম্ভব নয়, নোটিস ঝুলছে গাজ়িয়াবাদের পেট্রল পাম্পে। ছবি: পিটিআই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলার বলছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কে বিনা বাধায় বদলে নেওয়া যাবে ২০০০ টাকার নোট। কিন্তু নোট বদলের প্রথম দিন সেই ব্যাঙ্কেই ভিড় কম। উল্টে পেট্রল পাম্প মালিকদের মাথায় হাত! অভিযোগ, ২০০০ টাকার নোটের দাপটে তাঁদের ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। ব্যাপারটা কী?
নোট বদলের প্রথম দিন দেশের প্রায় সর্বত্র পেট্রল পাম্পগুলিতে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। তেলের দাম কমেনি, তা হলে লাইন কীসের? জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা বদলের চেয়ে মানুষ পেট্রল পাম্পে ২০০০ টাকার নোট দিয়ে তেল কেনাকে তুলনামূলক ভাবে বেশি সুবিধার বলে মনে করছেন। এতে আইনত কোনও বাধা নেই। কিন্তু সমস্যায় পড়ছে পাম্প। তাঁদের অভিযোগ, মাত্র ১০০, ২০০ টাকার তেল কিনেও বেশির ভাগ লোক ২০০০ টাকার নোট দিচ্ছেন। খুচরো ফেরত দিতে নাজেহাল হতে হচ্ছে পাম্প কর্মীদের। আর পাম্পের ক্যাশ বাক্সে জমছে একের পর এক ২০০০ টাকার নোট।
মঙ্গলবার হাওড়ার একটি পেট্রল পাম্পে ২০০ টাকার তেল কিনে ২০০০ টাকার নোট দেন এক ব্যক্তি। খুচরো কী ভাবে ফেরত দেবেন তা নিয়ে বচসা বাঁধে পাম্পকর্মীর সঙ্গে। ঠিক একই কারণে হাতাহাতি হওয়ার জোগাড় হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদের পাম্পেও। গ্রেটার নয়ডায় এক পাম্প কর্মী জানাচ্ছেন, আগে দিনে ১০ থেকে ২০টি ২০০০ টাকার নোট জমা পড়ত। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের আগেই দু’বান্ডিল ২০০০-এর নোট জমা পড়ে গিয়েছে।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে উত্তরপ্রদেশের জালৌনে এক যুবক স্কুটিতে ২০০ টাকার তেল ভরিয়ে ২০০০-এর নোট দেওয়ায় তাঁর সঙ্গে বচসা বাঁধে পাম্পকর্মীদের। শেষ পর্যন্ত যুবকের স্কুটি থেকে ২০০ টাকার পেট্রল বার করে নেওয়া হয়। পাম্পকর্মীদের সেই কাণ্ডের ভিডিয়ো ভাইরালও হয়ে গিয়েছে।
কী বলছেন ক্রেতারা? সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে সাধারণ মানুষ বলছেন, ব্যাঙ্কে গিয়ে নোট বদলানোর চেয়ে পেট্রল পাম্পে গিয়ে ২০০০-এর নোট দিয়ে তেল কেনাকে তাঁরা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক বলে মনে করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ২০১৬ সালের নোটবন্দির স্মৃতি যে তাঁদের ব্যাঙ্কের বদলে পাম্পের রাস্তা নিতে বাধ্য করছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু এতে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে পেট্রল পাম্প।
অল ইন্ডিয়া পেট্রোলিয়াম ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অজয় বনসল বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্রেতা ১০০ বা ২০০ টাকার তেল কিনে ২০০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতে খুচরো ফেরত দিতে বিরাট সমস্যায় পড়ছে পেট্রল পাম্প।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নোট বদলের ফরমান জারি হওয়ার আগে আমরা নগদ বিক্রির মাত্র ১০ শতাংশ ২০০০ টাকার নোট পেতাম। কিন্তু এখন আমরা মোট যা নগদ বিক্রি করছি, তার ৯০ শতাংশই ২০০০ টাকার নোট। প্রতি দিন আমাদের সেই সংখ্যক নোট ব্যাঙ্কে জমা করতে হচ্ছে।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, নগদী মুদ্রার বাজারে ২০০০ টাকার নোট রয়েছে ১০.৮ শতাংশ। যার আর্থিক মূল্য ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ২০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া বা বদল করা যাবে।