(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অখিলেশ যাদব এবং প্রফুল্ল পটেল (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’ নিয়ে আলোচনার দাবি জানাল বিরোধী দলগুলি। হইহট্টগোলের জেরে সারা দিনের মতো মুলতুবি করে দিতে হল সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন। আগামী মঙ্গলবার সংবিধান দিবস উপলক্ষে সংসদের অধিবেশন বসবে না। বুধবার সকাল ১১টায় ফের শুরু হবে অধিবেশন।
রাজ্যসভার সাংসদ জগদীপ ধনখড় জানান, আদানি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা চেয়ে সাংসদেরা তাঁকে ১৩টি নোটিস দিয়েছেন। কিন্তু নিয়ম মেনে সেই নোটিসগুলি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। তার পরেই আদানি ‘ঘুষকাণ্ডে’ আলোচনা চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা। মাঝে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে আলোচনাও করতে দেখা যায় ধনখড়কে। খড়্গেকে এই বিষয়ে বলার অনুমতিও দেন তিনি। তার পরেও অবশ্য হইহট্টগোল থামেনি। প্রথমে ১৫ মিনিট, পরে সারা দিনের মতো রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
প্রায় একই পরিস্থিতির সূত্রপাত হয় লোকসভাতেও। শোকপ্রস্তাব পাঠের পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংসদের নিম্নকক্ষে অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। ১২টার পর পুনরায় অধিবেশন শুরু হলে বিরোধী সাংসদেরা আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’ এবং মণিপুর সমস্যা নিয়ে আলোচনা চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সারা দিনের মতো অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়।
সোমবার সকালে অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব সাংসদকে এই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তার পরেই প্রথমে নাম না-করে, তার পর নাম করেই বিরোধীদের তোপ দাগেন মোদী। বলেন, “সংসদে সাংসদদের বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন কয়েক জন। এঁরাই সংসদে হাঙ্গামা বাধাচ্ছেন। ফলে বলার সুযোগ পাচ্ছেন না নতুন সাংসদেরা। সংসদের নিয়ন্ত্রণ এই সাংসদেরা হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।” নাম না-করলেও স্পষ্ট যে, মোদী বিরোধী সাংসদদের দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলার কথা। বিজেপি সূত্রে খবর, এই অধিবেশনেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল, বিপর্যয় মোকাবিলা সংশোধনী বিল আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়েও চলতি অধিবেশনে সংসদে বিল আনতে পারে এনডিএ শিবির। অন্য দিকে, আদানি ‘ঘুষকাণ্ড’ বিতর্ক, ওয়াকফ বিল এবং মণিপুর সঙ্কট— এই তিন বিষয় নিয়ে শীত অধিবেশনে ঝড় তোলার পরিকল্পনা করেছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধীরা ঝাড়খণ্ড নিজেদের দখলে রাখলেও মহারাষ্ট্র জিতে বেশি চাঙ্গা বিজেপি এবং তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবির। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে গৌতম আদানিকে ঘিরে যে ঝড়ের পূর্বাভাস, তাকে প্রতিহত করার যুদ্ধে বিজেপিকে ‘বিরাট’ মানসিক জোর জোগাচ্ছে মরাঠাভূমের ‘বিরাট’ জয়।
এখনও পর্যন্ত সরকারপক্ষের যা সিদ্ধান্ত, তাতে ১৫টি বিল আনা হতে পারে লোকসভার চলতি অধিবেশনে। যদিও সব চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াবে ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল। ওয়াকফ বা মণিপুরের মতো বিষয় থাকলেও, অধিবেশনের শুরু থেকে বিরোধীরা বেশি চাপ তৈরি করতে চলেছেন আদানির ‘ঘুষকাণ্ড’ নিয়েই। ঝোড়ো অধিবেশনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে রবিবারের সর্বদলীয় বৈঠকও।