নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। — ফাইল চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সঙ্গে ‘হিন্দু রাষ্ট্রের যোগ’ আছে বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
লোকসভা ভোটের আগে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। বাদল অধিবেশনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার শান্তিনিকেতনের প্রতীচী বাড়িতে অমর্ত্য জানান, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা আসলে ‘একটা কঠিন জিনিসকে খুব অপ্রতিষ্ঠিত ভাবে সহজ করার প্রচেষ্টা’।
অমর্ত্যের কথায়, ‘‘আজ একটা কাগজে দেখলাম, ইউসিসি নিয়ে আর দেরি করা যায় না! এই রকম মূর্খ কথা কোথা থেকে এল! ইউসিসি নিয়ে আমরা হাজার বছর ধরে আছি এবং থাকতেও পারি। তাই ইউসিসি-র মধ্যে ধাপ্পা আছে। এটা তাঁরা (কেন্দ্র) কী করে চালু করতে পারেন? চালু করে লাভ হচ্ছে কাদের? তাঁরা যে-ভাবে দেশ চালিয়ে নিয়ে যেতে চান, তার পদ্ধতি ভুল আছে, এটা আমাদের মানতেই হবে।’’ তাঁর মতে, ‘‘হিন্দু রাষ্ট্রের সঙ্গে এর যোগ নিশ্চয়ই আছে। হিন্দু রাষ্ট্র তো ভারতবর্ষের একমাত্র এগোনোর উপায় নয়। হিন্দু রাষ্ট্র হলে যেমন কিছু কিছু পথ বন্ধ করা হবে। অন্য দিকে হিন্দু রাষ্ট্রের সাহায্যে এগোনোর কিছু কিছু পথ প্রশস্ত থাকতে পারে। এটা ঠিকই যে, এর মধ্য হিন্দু ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাকে অপব্যবহার বলা যায়। আমি মনে করি, এর মধ্যে সেই অপব্যবহার যথেষ্টই আছে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের মধ্যেই ভারতে ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেই প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘এই অত্যন্ত সহজ কথা। ওবামা বলেছেন বলে সহজ হতে পারে। কিন্তু ভারতবর্ষকে ভাগ করার নানা রকম উপায় আছে। তার মধ্যে একটা হিন্দু-মুসলমান পার্থক্য করা। ছেলেমেয়ে, ধনী-দরিদ্র এই পার্থক্যের মধ্যেই খুব সহজে আমরা দেশভাগের উপায় খুঁজে পেতে পারি। এটা ওবামা বলে ভালই করেছেন, ওবামা ছাড়াও বহু লোকে বলতে পারতেন।’’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এক রাষ্ট্র বললেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা নয়। আমাদের ভাবতে হবে, কী ভাবে এক রাষ্ট্র করা সম্ভব হয়, যাতে আমাদের মধ্যে বিভক্ততা কমানো যায়।’’